পায়েলের জন্য পাক্কা এক ঘন্টা হল বসে আছে তমাল। আজ প্রায় সাতদিন হয়ে গেল একটু বসে কথা বলার সুযোগ পায়নি তমাল। বহুবার বহুভাবে বোঝাতে চেয়েছে পায়েলের প্রতি তার ভালোবাসা কিন্তু পায়েল কোনও গুরুত্বই দেয়নি। উল্টে ঐ জাতীয় কথা বললে পায়েল তমালকে এড়িয়ে চলতে থাকে। সেটা আরও কষ্টের তাই নানা অজুহাতে পায়েলকে সে ডাকে। বেশীর ভাগই নোটস্ দেবার অজুহাতে ডাকে। আজ সেরকমই একটা দিন।
নাহ্ আজ আর বোধহয় পায়েল এলনা। ইতিমধ্যে পাঁচ কাপ কফি আর একটা ফিসফ্রাই খাওয়া হয়ে গেছে। তমাল উঠবো উঠবো করছে ঠিক তখনই লাল রঙের একটা ঝলক দেখতে পেল। হ্যাঁ পায়েল আজ এই রঙের চুড়িদার পরে কলেজ এসেছে। তমাল নিজেকে প্রস্তুত করতেনা করতেই পায়েল ঝড়ের মত এসে সামনের চেয়ারে বসলো।
“কই দে?” চেয়ারে বসেই পায়েলের প্রথম কথা।
ওকে দেখেই তমাল দুটো কফি আর একটা ফিসফ্রাই অর্ডার করেছিল। সেদিকে একবার তাকিয়ে বলল,
—“দাঁড়া একটু সবুর করনা বাপু!তোর সাথেকি আমার শুধু নোটসের সম্পর্ক?”
এগিয়ে দেওয়া পিন আপ করা পাঁচ পৃষ্ঠার নোট টা পায়েল উলটে পালটে দেখতে বলল,—“তবে কি কফি-ফিস্ফ্রাই খাবার সম্পর্ক?”
—“ইয়ারকি করিস না। তুই জানিস কলেজের প্রতিটি মেয়ে আমার সাথে পাঁচটা মিনিট কাটাবার জন্য উৎসুক হয়ে থাকে। আর আমি এখানে তোর পিছনে আননেসেসারি একটা ঘন্টা নষ্ট করে ফেললাম।”
—“সত্যি!কেন করলি তুই!” পায়েলের ঠোঁটের কোনে শ্লেষের ে উঁকি দিচ্ছে সেটা তমালের চোখ এড়ালোনা।
—“তুই কি বুঝিসনা কিছুই!!আমি যে তোকে কতটা ভালোবাসি!!” তমাল যেন খাদের শেষ সীমায় চলে এসেছে।
কথাটা শুনেই চকিতে মুখ তুলে তাকাল পায়েল। কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। মনে হল নিজেকে যেন সংযত করলো। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে বলতে শুরু করলো,—“আমার বাবা নেই জানিস”
—“হ্যাঁ জানি তোর মা উইডো” তমাল সায় দিল
—“উইডো নয়। আমার মা জানেই না আমার বাবা কে!”
—“মানে!!” তমাল অবাক
—“আমার মা একজন যৌনকর্মী। আমি মায়ের আনচাহী সন্তান”
তমালের মুখ থেকে যেন কথা সরছিলনা। —“আমার মা-ও যৌনকর্মীর মেয়ে। যৌনকর্মীদের মেয়ে হলে মনে করে হাতে স্বর্গ পেল। মেয়েকে খাটিয়ে বৃদ্ধ বয়সে বসেবসে খাওয়া যায়। আমার দিদিমা নিজে হাতে ধরে আমার মাকে এই কাজে এনছিল। কিন্তু আমার মা আমাকে লেখাপড়া শিখিয়েছে। এখন আমি নিজের ইচ্ছায় এমবিএ করছি চাকরী করে মাকে আমার কাছে নিয়ে আসব। এই সব কাজ আর মাকে করতে দেবনা। আমার কাছে এই ভালোবাসা-টাসা করার সময় নেই।ছোটবেলা থেকে আমি মাকে পাইনি। চাকরী পেয়ে আমি মার কাছে থাকবো। ”
তমাল ফিসফ্রাইটা এগিয়ে দিয়ে বলল,—“ভালই হয়েছে ঐসব নোংরামি তোকে করতে হয়নি”
—“নোংরামি !!”মুহুর্তে ফুঁসে উঠল পায়েল।
—“তোর সোস্যাল ওয়াকার মা যখন সরকারী অনুদান পাবার জন্য বড় বড় অফিসারদের কমিসন হিসাবে যা দ্যান সেটা কি? তোর বড় কোম্পানিতে চাকরী করা ডাইরেক্টর বাবা যখন নিজের পিএর চাকরী বাঁচিয়ে রাখার অজুহাত দেখিয়ে ট্যুরে নিয়ে গিয়ে যা করেন সেটা কি?তুই এতবড় কলেজে চান্স পাবার জন্য ট্রাস্টিকে যা দিয়েছিস। সেটা কি? নোংরামি এগুলো। আমার মা দিদিমা যা করেছে,পেটের তাগিদে। আর তোরা যেটা করিস সেটা সুবিধা ভোগের তাগিদ,নোংরামি সেটা।”
তমাল থতমত খেয়ে গিয়েছিল।
পায়েল নোটগুলো গুছিয়ে তমালের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,—“এই নোট গুলো আমার কোনও কাজে লাগবেনা। এগুলো আমি কালকেই লাইব্রেরিতে বসে তৈরি করে ফেলেছি। আমি বেরোলাম। ফিসফ্রাইটা তুই-ই খেয়ে নে”।
টেবিলের ওপর পরে থাকা ব্যাগটা কাঁধে তুলে নিয়ে বেড়িয়ে গেল পায়েল। তমাল জানে এই শেষ দেখা।
Thursday, 29 September 2016
প্রত্যুত্তর
Subscribe to:
Posts (Atom)