Saturday, 10 February 2018

দিল্লী আগ্রা দ্বিতীয় দিন 10/10/17 চতুর্থ পর্ব



রোদ কমে আসছিল। সাথে সাথে আমাদের এনার্জিও। আগ্রা ফোর্টের ভিতরে পাথরের আড়ালে বেশ ছায়া। ঢোকার মুখে বেশ চওড়া আর বিশাল উঁচু এক করিডোরের মত। যেখান থেকে হাততালি দিয়ে আগন্তুকের আগমন বার্তা পাঠানো হত কেল্লার ভিতরে। আশ্চর্য্য 'কথা' প্রতিফলিত হয়না কিন্তু 'আওয়াজ' প্রতিফলিত হয়। জায়গাটা ঢালু তাই দোতলার সমান উচ্চতা উঠে এলাম কোনও কষ্ট না করেই। পরপর মহল গুলো পার হচ্ছি আর চোখের সামনে যেন ইতিহাসের একএকটা অধ্যায় খুলে যাচ্ছে। সম্রাটদের পছন্দের নির্মানই তাদের পরিচয়। আকবর পছন্দ করতেন লাল বালু পাথর, জাহাঙ্গীর পছন্দ করতেন সাদা কিন্তু মার্বেল হয়তো সহজলভ্য ছিলনা সেই সময়। তাই বেলে পাথরের ওপর চুনের পলেস্তারা। আর শাহজাহানের মহল, সে এক অপূর্ব সৃষ্টি। সাদা মার্বেলের ওপর দামী রঙীন পাথরের নকশা। দেওয়ানি আম, দেওয়ানি খাস - সে এক অসাধারণ সৃষ্টি। আমরা এসে দাঁড়ালাম সেই মহলের সামনে যেখানে শাহজাহান শেষ ক'বছর বন্দী ছিলেন। পরন্ত বিকেলের আলোয় মহল টাকে আরও বেশী বিষন্ন লাগছিল। দেওয়ানি খাসের সামনের বিশাল প্রাঙ্গণ থেকে দেখা যাচ্ছিল তাজমহলকে। মনেহচ্ছিল তাজমহলও তার একাকীত্ব, বিষন্নতা ছড়িয়ে দিচ্ছে গোটা আগ্রা শহরে। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছিল সেই বিখ্যাত ছাতার মত ছাদওয়ালা অলিন্দ, যেখান থেকে সম্রাট চেয়ে থাকতেন তাজমহলের দিকে। এতখানি ঘুরে আমার মা সামান্য অসুস্থ বোধ করছিলেন। একটা জায়গা দেখে উনি একটু বসলেন।আর আমরা চারপাশে চোখ ঘোরালাম। ঝাঁকেঝাঁকে টিয়াপাখি এসে কলরব করছে, এ এক বিরাট লোভনিয় দৃশ্য আমাদের কাছে। ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে এই দৃশ্য অমূল্য।আমাদের ঠিক নীচে একতলায় সার দিয়ে অসংখ্য কামরা। যারা দেখছিলেন বলতে শুরু করলেন ওগুলো দোকান। কিন্তু ওই পুরো এলাকা ছিল আকবরের হারেম। ওপরের ঘরে থাকতেন রানীরা আর নীচের ছোট একরকম ওই কোয়াটারস্ এ থাকতো সব দাস-দাসি।দোতলায় যেখানে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম তার পাশেই ছিল সম্রাটের বসার আসন, যেখানে বসে উনি হারেমের অভাব-অভিযোগ শুনতেন ও বিচার করতেন। ওখান থেকে আমরা সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলাম দেওয়ানি আম। সম্রাট যেখানে বসতেন সে জায়গাটি খুব সুন্দর। উপরে রানীদের বসার জন্য আড়াল বজায় রেখে জায়গা রয়েছে। আমরা সকলেই জানি আকবরের সময়কাল থেকেই রাজমহিষীরা শাসনকাজে  এক বিশেষ জায়গা আলোকিত করে এসেছেন। দেওয়ানি আমের সামনেই রয়েছে বাবরের আমলে তৈরী বিশাল 'বাওলী'। বাওলী আর কুয়োঁর মধ্যে পার্থক্যটা এখানে বলে রাখি। বাওলীতে সিঁড়ি থাকে, কুয়োয় থাকেনা। আমরা এখান থেকেই সবার পিছুপিছু বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। বেরিয়েই যাচ্ছিলাম, কিন্তু থমকে দাঁড়ালাম সামনে একটা ইংরেজ সমাধি দেখে। নাম লেখা john russel colvin।হ্যাঁ মনে পড়লো পরেছিলাম উনি মোগলদের পতনের পর আগ্রা ফোর্টের চার্জে ছিলেন। কলেরা হয়ে মারা যান। ওনার দেহ বাইরে আনা যায়নি বলে ভিতরেই সমাধিস্ত করার পরিকল্পনা করা এবং সে স্থানটি ঠিক হয় একদম দেওয়ানি আমের সামনে। এ নিয়ে অনেকের আপত্তি থাকলেও শোনা হয়নি। সত্যি বড্ড বেমানান এই সমাধিটি এখানে। আর একটা কথার উল্লেখ করাটা একান্ত জরুরি। গজনীর সুলতান মামুদ যে সোমনাথ মন্দির আক্রমণ করে লুঠ করেছিলেন তা আমরা সকলেই জানি। তার সমাধি মন্দিরের দরজা ছিল হুবহু সোমনাথ মন্দিরের চন্দন কাঠের দরজার ন্যয়। অনুমান করা হয়ওটি সোমনাথ মন্দিরেরই দরজা। ইংরেজরা সেটি উখরে তুলে নিয়ে আসে আর আগ্রা ফোর্টে সেটি রাখে। কিন্তু পরে জানা যায় ওটি স্থানীয় কারিগর দিয়ে তৈরী একটি দরজা। সে দরজা আজও বিদ্যমান ফোর্টে।

বিকেল ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে সন্ধ্যের দিকে। আমরাও ইতিহাসকে 'কাল'এর হাতে ছেড়ে বেড়িয়ে এলাম।

আগ্রা-দিল্ল পর্ব- 3


ই মেহতাব বাগে ঢোকার মুখে গাছের ছায়ায় ছোটখাট খান দুই দোকান ছিল। তারই পাশে বসে একটা ঊট উদাস মুখে জাবর কাটছিল। আমরা একটা দোকানে বসে জল খেয়ে আগ্রা ফোর্টের দিকে রওনা দিলাম।রাস্তার মাঝেই রাজা হঠাৎ বলে বসলো 'আজ সময় নেই, তাজমহল কাল দেখবো' শুনেই আমার মাথা হয়ে গেল গরম। আমার কোলকাতা থেকেই পরিকল্পনা ছিল প্রথম দিন আগ্রা ফোর্ট আর তাজমহল আর দ্বিতীয় দিন ফতেহপুর সিক্রী দেখবো। শুধু শুধু দুটো জায়গা দেখে সময় নষ্ট হল।এর জন্য রাজার সাথে বেশ খানিকটা তর্ক বিতর্কও হল। তারওপর আগ্রা ফোর্টের সামনে দিয়ে হুস্ করে বেরিয়ে গেল অটো পরশুর দিল্লী যাবার বাস বুক করতে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল। যাওয়ার সাথে সাথেই বাস বুকিং হয়ে গেল। আমরা যখন আগ্রা ফোর্টের সামনে পৌছলাম তখন পৌনে চারটে। তাজমহলে সারে চারটায় টিকিট দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

যাইহোক আমরা টিকিট কেটে ঢুকলাম। মা তো ভীষণ ভাবে ইমোশনাল হয়ে পরলো। ফ্লাশব্যাকে মা আকবরের আমলে চলে গেল। .....

যদিও বর্তমান দুর্গটির অধিকাংশই মোঘল আমলে নির্মিত হলেও সেখানে ১১ শতকে নির্মিত একটি প্রাচীন দুর্গের অবস্থান ছিল। ১৪৭৫ সালে আগ্রা ফোর্ট ছিল রাজা বাদল সিং এর অধীনে ইটের তৈরী একটি সামরিক দুর্গ। যার নাম ছিল বাদলগড়। ইতিহাসে ১০৮০ সালে সর্বপ্রথম এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এ সময়ে গজনীর সামরিক বাহিনী এই দুর্গ দখল করে।সুলতান সিকান্দার লোদি (১৪৮৮-১৫১৭) দিল্লী থেকে তার রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তর করেন। এরপর থেকে আগ্রা দ্বিতীয় রাজধানীর  স্থান পেয়েছিল এবং সুলতানি আমলে আগ্রা থেকেই রাজকীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হত। তার পুত্র সিকান্দার লোদি ১৫১৭ সালে পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট আকবারের নিকট পরাজিত ও নিহত হবার পূর্ব পর্য়ন্ত এখানে অবস্থান করেন। সিকান্দার লোদি এই কেল্লার বেশ কিছু ইমারত ও ইদারা নির্মাণ করেছিলেন।

১৫২৬ সালে দিল্লী জয়ের পর সম্রাট বাবর আগ্রা দুর্গে অবস্থান করেন। তিনি এখানে একটি বাউলি (সিঁড়ি যুক্ত ইদারা) নির্মাণ করেন। ১৫৩০ সালে এই দুর্গেসম্রাট হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন বিলগ্রামে শের শাহরে কাছে পরাজিত হন। ১৫৫৫ সাল পর্য়ন্ত এই দুর্গ শের শাহের দখলে থাকে। এরপর হুমায়ন আগ্রা দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
১৫৫৬ সালে আদিল শাহ শূরীর সেনাপতি হিমু আগ্রা ফোর্ট পুনরায় দখল করে এবং আগ্রার পলায়নরত গভর্ণরের পশ্চাতধাবন করেন। এসময়ে তুঘলকাবাদের সমরাঙ্গণে মোগল বাহিনীর সাথে তার যুদ্ধ হয়। যা তুঘলাকাবাদের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবর আগ্রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। ঐতিহাসিক আবুল ফজল সেই সময়ের দুর্গকে বাদালগড় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্রাট আকবর রাজস্থানের আরাউলি থেকে সংগৃহীত বেলেপাথর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দুর্গটির সংস্কার সাধন করেন। দুর্গের ভিতরের অংশে ইটের গাঁথুনি আর বাইরের অংশে আছে বেলেপাথরের আস্তরন। প্রায় ৪ হাজার কর্মী ৮ বছর প্রতিদিন পরিশ্রম করে ১৫৭৩ সালে আগ্রা দুর্গের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে।

সম্রাট আকবরের পৌত্র সম্রাট শাহজাহানের আমলে আগ্রা দুর্গ তার বর্তমান রূপ লাভ করে। শাহাজাহান লাল বেলেপাথরের নির্মিত ইামারতের চেয়ে শ্বেত পাথর দ্বারা নির্মিত ভবন অধিকতর পছন্দ করতেন।

১৮ শতকের প্রথম দিকে মারাঠা সম্রাট দুর্গটি দখল করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মারাঠা ও তাদের শত্রুরা আগ্রা দুর্গের নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করে। ১৭৬১ সালেআহমেদ শাহ আবদালি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধেমারাঠাদের পরাজিত করলে পরবর্তী এক দশক মারাঠারা এই দুর্গ দখলের কোন চেষ্টা করতে পারেনি।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে এই দুর্গে দেশীয় সিপাহী ও ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

দিল্লী আগ্রা ২য় দিন পর্ব ২



নেমেই রোদ্দুরে মাথা ঘুরে যাবার যোগাড়। কিন্তু মনে মনে ফুটছি কতক্ষণে দর্শন হবে। আমাদের হোটেল বুক করা ছিল। ঠিক তাজমহলের পশ্চিম গেটের সামনে। রাজা ফোন করে হোটেলে যাবার পথ জিগ্গেস করে নিল। দু-তিনজন অটো ড্রাইভার আমাদের ছেঁকে ধরেছিল। তার মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক এক অটো ড্রাইভারের সাথে রফা হল। আমরা পোটলাপাটলী নিয়ে চেপে বসলাম। রাজা চলতেচলতেই অটোওয়ালার সাথে কথা বলে ঠিক করে নিল। খুব কমে কয়েকটা স্পট দেখাবে। আমরা হুরমুর করে হোটেলে ঢুকলাম, ঘর দেখলাম ,ফ্রেস হলাম ,বেড়িয়ে পরলাম। প্রতিটা মিনিট যেন আমাদের কাছে প্ল্যাটিনামের থেকেও দামি ছিল। প্রথমেই আমরা গেলাম একটা রেস্ট্রোরেন্টে। মেনুকার্ডটা হাতে নিয়ে অনুভব করলাম, সত্যি জব্বর ক্ষিদে পেয়েছে।সাথে জল পিপাসা।

খাওয়া শেষ করে প্রয়োজন মত জল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, 'বিবি কা মকবরা'র উদ্দ্যেশে। এর আবার অনেক নাম! স্থানিয় লোক বলে 'মিনি তাজ' আবার কেউ বলে 'মোতিবাগ'। সে যে নামেই ডাক, গোলাপ তো গোলাপই থাকে,এ-ও সেরকমই। এটি তৈরী করেছিলেন নুরজাহান, তার মা বাবার সমাধি হিসাবে। পরে তার পরিবারের সকলে এখানেই সমাধিস্ত হন। সত্যি মিনি তাজমহলই বটে কি অসাধারণ মার্বেল পাথরের জালির কাজ, ভাষায় বর্ননা করা যায়না। সমাধি, তাই জুতো খুলতে হবে। কিন্তু সানপাথর যেন তপ্ত তাওয়া। কার্পেট পাতা ছিল দৌড়ে গিয়ে তাতেই পা রেখে স্বস্তি।সমাধি  মন্দিরের দেওয়াল ছিল খুবই সাধারণ, অনারম্বর। কিন্তু ছাদে মোগোলিয়ানা সুস্পষ্ট। এই সমাধিই নাকি তাজমহলের প্রেরণা। চারিদিকে সুন্দর ফুলের বাগান। আমরা বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।

আমাদের পরবর্তি গন্তব্য ছিল 'মেহতাব বাগ'। এই জায়গাটা ঠিক তাজমহলের উল্টোদিক, যমুনার অন্যপারে। তাজমহলের বেসমেন্টে যে 22টা ঘর রয়েছে সেগুলো এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।শাহ্জাহান নিজের জন্য একটি কালো তাজমহল বানাবেন, যেটা আর পরবর্তী কালে বানানো হয়নি, সেটি এখানেই বানাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন।জায়গাটা এমন কিছু আহামরি নয়। বাগান তৈরী হচ্ছে। তবে এখানে দাঁড়িয়ে তাজমহলের বিশালত্ব টের পাওয়া যায়।
এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল সত্যিই কি শাহজান এখানে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকতেন তাঁর অমোঘ সৃষ্টির দিকে। না আমি কোনও তর্ক বিতর্কে যেতে চাইনা যে তাজ কে বানিয়েছিলেন। আমি শুধু এর সৌন্দর্য্যের বিশালত্ব উপভোগ করি।

Friday, 9 February 2018

মীরজাফর




খুব আশ্চর্য্য হয়েছিলাম মুর্শিদাবাদে, যখন দেখলাম মীরজাফরকে ওখানকার লোক সিরাজের সমান সন্মান দিচ্ছে। একজনগাইড তো রিতীমত গর্জে উঠলেন,—“ওনাকে খারাপ বলবেন না। নবাব সীরাজৌদ্দলার বদলে যদি উনি নবাব হতেন তাহলে বাংলার এই অবস্থা  হতো না, ইংরেজ বাংলা নিতেই পারতোনা”। বলে কি লোকটা মীরজাফর খারাপ ছিলনা! মুর্শিদাবাদের ইতিহাস পরা শুরু করলাম।

আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে অত্যন্ত আদর দীয়ে এক প্রকার বাঁদরই তৈরী করেছিলেন এবং শাষক হতে গেলে একজন মানুষের মধ্যে যে গুনগুলি থাকা দরকার তার সবকটি সিরাজের মধ্যে ছিল অনুপস্থিত। আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে তাঁর লাকী চার্ম মনে করতেন তাই সিরাজকে দুধে-ভাতে রাখতেন। ফলে সিরাজের রাজ্য,শাষক,শাসন,কুটনিতী — এসব সম্বন্ধে কোনও ধারনাই তৈরী  হয়নি। অন্যদিকে মীরজাফরও আলিবর্দীর আত্মীয় ছিলেন। অত্যন্ত কমবয়স থেকেই তিনি শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন,কুটনীতি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। আলিবর্দী খাঁ যখন মারাঠা দস্যুদের নিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন সেই সময় কিনতু মীরজাফর তিন মারাঠা দস্যু অর্থ্যাৎ বর্গী নেতাকে হত্যা করে পিছু হটতে বাধ্য করেন। সেই সময় সিরাজ কিন্তু ছিলেন বিলাসব্যসনে মত্ত।
যদি বংশ পরিচয় এবং রাজকিয় রক্ত নবাবী সিংহাসনের দাবীদার হয় তাহলেও সিরাজ পিছিয়ে ছিলেন। মীরজাফর ছিলেন ঈসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদের নাতি। মীরজাফরের পিতা হুসেন নাজাফি ছিলেন মক্কায় হজরত মহম্মদের সমাধির কেয়ারটেকার। সম্রাট ঔরঙ্গজেব যখন মক্কা সরিফ যান তখন হুসেন নাজাফির সাথে আলাপ হয়। সম্রাট হুসেনের অগাধ জ্ঞান দেখে অভিভুত হয়ে তাকে দিল্লী নিয়ে আসেন এবং দেশের সর্বচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারক পদে বহাল করেন। হুসেন নাজাফি সম্রাট শাহজাহানের বড় পুত্র তথা ঔরঙ্গজেবের বড় ভাই দারা শিখোর কন্যাকে বিবাহ করেন এবং তাদের সন্তান হলেন মীরজাফর । মীরজাফর আবার আলিবর্দী খাঁর ভাগ্নীকে বিবাহ করেন

যাইহোক সিরাজের চরিত্রে দৃঢ়তার খুবই অভাব ছিল। সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতেন। কুটনিতীজ্ঞ একেবারেই ছিলেন না। উনি  ওনার রাজসভায় হিন্দুদের প্রাধান্য দিয়ে ফেলায় ওনার নিজের সম্প্রদায়ের মানুষরা বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে পড়ল। আর সেই সুযোগে জগৎশেঠ, উমিচাঁদের মত সার্থপর লোকেরা বাংলা লুটেপুটে খেতে লাগল। শুধু মীরজাফর নন অনেক অভিজ্ঞজনই তখন মনে করছিলেন বাংলাকে বাঁচানোর জন্য সিরাজের পতন অবশ্যম্ভাবী।

সিরাজের প্রতি মীরজাফরের কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিলনা। সিরাজ ধরা পরার পর যখন মীরজাফরের পুত্র মীরমিরাণ তাঁকে প্রাণদন্ড দেবার জন্য দরবারে প্রস্তাব উথ্থাপন করেন। মীরজাফর কোনও উত্তর দেননি। পরে রাতেয় অন্ধকারে মীরজাফর বিশ্রাম নিতে চলে যাবার পর মীরমিরানের নির্দেশে মহম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করেন এবং পরেরদিন সকালে সিরাজের দেহটুকরো গুলি হাতির পিঠে চেপে সারা মুর্শিদাবাদ ছড়ায়। খবর পেয়ে সিরাজের মা আমিনা বেগম সেই টুকরো একত্র করে খোসবাগে সমাধিস্থ করেন।
মীরান তার সিংহাসনে বসার পথ পরিস্কার করার জন্য সিরাজের ১১ বছরের ভাই মিরমেহেদী এবং আরএক ভাইপো মুরাদ্দৌল্লাকেও হত্যা করে।

‘নেমকহারাম ’ এই তকমাটাইংরেজদেরই দেওয়া কারন ইংরেজ জানতো মীরজাফর মনে মনে চাননি।  শুধুমাত্র  চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নেমকহারাম যে ছিলেন না তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ইংরেজরা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। বিশ্বাসঘাতককে বাঁচিয়ে রাখা ইংরেজের স্বভাব বিরুদ্ধ।