নেমেই রোদ্দুরে মাথা ঘুরে যাবার যোগাড়। কিন্তু মনে মনে ফুটছি কতক্ষণে দর্শন হবে। আমাদের হোটেল বুক করা ছিল। ঠিক তাজমহলের পশ্চিম গেটের সামনে। রাজা ফোন করে হোটেলে যাবার পথ জিগ্গেস করে নিল। দু-তিনজন অটো ড্রাইভার আমাদের ছেঁকে ধরেছিল। তার মধ্যে অপেক্ষাকৃত বয়স্ক এক অটো ড্রাইভারের সাথে রফা হল। আমরা পোটলাপাটলী নিয়ে চেপে বসলাম। রাজা চলতেচলতেই অটোওয়ালার সাথে কথা বলে ঠিক করে নিল। খুব কমে কয়েকটা স্পট দেখাবে। আমরা হুরমুর করে হোটেলে ঢুকলাম, ঘর দেখলাম ,ফ্রেস হলাম ,বেড়িয়ে পরলাম। প্রতিটা মিনিট যেন আমাদের কাছে প্ল্যাটিনামের থেকেও দামি ছিল। প্রথমেই আমরা গেলাম একটা রেস্ট্রোরেন্টে। মেনুকার্ডটা হাতে নিয়ে অনুভব করলাম, সত্যি জব্বর ক্ষিদে পেয়েছে।সাথে জল পিপাসা।
খাওয়া শেষ করে প্রয়োজন মত জল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, 'বিবি কা মকবরা'র উদ্দ্যেশে। এর আবার অনেক নাম! স্থানিয় লোক বলে 'মিনি তাজ' আবার কেউ বলে 'মোতিবাগ'। সে যে নামেই ডাক, গোলাপ তো গোলাপই থাকে,এ-ও সেরকমই। এটি তৈরী করেছিলেন নুরজাহান, তার মা বাবার সমাধি হিসাবে। পরে তার পরিবারের সকলে এখানেই সমাধিস্ত হন। সত্যি মিনি তাজমহলই বটে কি অসাধারণ মার্বেল পাথরের জালির কাজ, ভাষায় বর্ননা করা যায়না। সমাধি, তাই জুতো খুলতে হবে। কিন্তু সানপাথর যেন তপ্ত তাওয়া। কার্পেট পাতা ছিল দৌড়ে গিয়ে তাতেই পা রেখে স্বস্তি।সমাধি মন্দিরের দেওয়াল ছিল খুবই সাধারণ, অনারম্বর। কিন্তু ছাদে মোগোলিয়ানা সুস্পষ্ট। এই সমাধিই নাকি তাজমহলের প্রেরণা। চারিদিকে সুন্দর ফুলের বাগান। আমরা বেরিয়ে এলাম সেখান থেকে।
আমাদের পরবর্তি গন্তব্য ছিল 'মেহতাব বাগ'। এই জায়গাটা ঠিক তাজমহলের উল্টোদিক, যমুনার অন্যপারে। তাজমহলের বেসমেন্টে যে 22টা ঘর রয়েছে সেগুলো এখান থেকে স্পষ্ট দেখা যায়।শাহ্জাহান নিজের জন্য একটি কালো তাজমহল বানাবেন, যেটা আর পরবর্তী কালে বানানো হয়নি, সেটি এখানেই বানাবেন বলে মনস্থ করেছিলেন।জায়গাটা এমন কিছু আহামরি নয়। বাগান তৈরী হচ্ছে। তবে এখানে দাঁড়িয়ে তাজমহলের বিশালত্ব টের পাওয়া যায়।
এখানে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছিল সত্যিই কি শাহজান এখানে দাঁড়িয়ে চেয়ে থাকতেন তাঁর অমোঘ সৃষ্টির দিকে। না আমি কোনও তর্ক বিতর্কে যেতে চাইনা যে তাজ কে বানিয়েছিলেন। আমি শুধু এর সৌন্দর্য্যের বিশালত্ব উপভোগ করি।
No comments:
Post a Comment