Saturday, 10 February 2018

আগ্রা-দিল্ল পর্ব- 3


ই মেহতাব বাগে ঢোকার মুখে গাছের ছায়ায় ছোটখাট খান দুই দোকান ছিল। তারই পাশে বসে একটা ঊট উদাস মুখে জাবর কাটছিল। আমরা একটা দোকানে বসে জল খেয়ে আগ্রা ফোর্টের দিকে রওনা দিলাম।রাস্তার মাঝেই রাজা হঠাৎ বলে বসলো 'আজ সময় নেই, তাজমহল কাল দেখবো' শুনেই আমার মাথা হয়ে গেল গরম। আমার কোলকাতা থেকেই পরিকল্পনা ছিল প্রথম দিন আগ্রা ফোর্ট আর তাজমহল আর দ্বিতীয় দিন ফতেহপুর সিক্রী দেখবো। শুধু শুধু দুটো জায়গা দেখে সময় নষ্ট হল।এর জন্য রাজার সাথে বেশ খানিকটা তর্ক বিতর্কও হল। তারওপর আগ্রা ফোর্টের সামনে দিয়ে হুস্ করে বেরিয়ে গেল অটো পরশুর দিল্লী যাবার বাস বুক করতে। মেজাজটা তিরিক্ষি হয়ে গেল। যাওয়ার সাথে সাথেই বাস বুকিং হয়ে গেল। আমরা যখন আগ্রা ফোর্টের সামনে পৌছলাম তখন পৌনে চারটে। তাজমহলে সারে চারটায় টিকিট দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

যাইহোক আমরা টিকিট কেটে ঢুকলাম। মা তো ভীষণ ভাবে ইমোশনাল হয়ে পরলো। ফ্লাশব্যাকে মা আকবরের আমলে চলে গেল। .....

যদিও বর্তমান দুর্গটির অধিকাংশই মোঘল আমলে নির্মিত হলেও সেখানে ১১ শতকে নির্মিত একটি প্রাচীন দুর্গের অবস্থান ছিল। ১৪৭৫ সালে আগ্রা ফোর্ট ছিল রাজা বাদল সিং এর অধীনে ইটের তৈরী একটি সামরিক দুর্গ। যার নাম ছিল বাদলগড়। ইতিহাসে ১০৮০ সালে সর্বপ্রথম এর উল্লেখ পাওয়া যায়। এ সময়ে গজনীর সামরিক বাহিনী এই দুর্গ দখল করে।সুলতান সিকান্দার লোদি (১৪৮৮-১৫১৭) দিল্লী থেকে তার রাজধানী আগ্রায় স্থানান্তর করেন। এরপর থেকে আগ্রা দ্বিতীয় রাজধানীর  স্থান পেয়েছিল এবং সুলতানি আমলে আগ্রা থেকেই রাজকীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হত। তার পুত্র সিকান্দার লোদি ১৫১৭ সালে পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট আকবারের নিকট পরাজিত ও নিহত হবার পূর্ব পর্য়ন্ত এখানে অবস্থান করেন। সিকান্দার লোদি এই কেল্লার বেশ কিছু ইমারত ও ইদারা নির্মাণ করেছিলেন।

১৫২৬ সালে দিল্লী জয়ের পর সম্রাট বাবর আগ্রা দুর্গে অবস্থান করেন। তিনি এখানে একটি বাউলি (সিঁড়ি যুক্ত ইদারা) নির্মাণ করেন। ১৫৩০ সালে এই দুর্গেসম্রাট হুমায়ুনের রাজ্যাভিষেক হয়। ১৫৪০ সালে হুমায়ুন বিলগ্রামে শের শাহরে কাছে পরাজিত হন। ১৫৫৫ সাল পর্য়ন্ত এই দুর্গ শের শাহের দখলে থাকে। এরপর হুমায়ন আগ্রা দুর্গ পুনরুদ্ধার করেন।
১৫৫৬ সালে আদিল শাহ শূরীর সেনাপতি হিমু আগ্রা ফোর্ট পুনরায় দখল করে এবং আগ্রার পলায়নরত গভর্ণরের পশ্চাতধাবন করেন। এসময়ে তুঘলকাবাদের সমরাঙ্গণে মোগল বাহিনীর সাথে তার যুদ্ধ হয়। যা তুঘলাকাবাদের যুদ্ধ নামে পরিচিত।

১৫৫৮ সালে সম্রাট আকবর আগ্রায় রাজধানী স্থানান্তর করেন। ঐতিহাসিক আবুল ফজল সেই সময়ের দুর্গকে বাদালগড় হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্রাট আকবর রাজস্থানের আরাউলি থেকে সংগৃহীত বেলেপাথর দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ দুর্গটির সংস্কার সাধন করেন। দুর্গের ভিতরের অংশে ইটের গাঁথুনি আর বাইরের অংশে আছে বেলেপাথরের আস্তরন। প্রায় ৪ হাজার কর্মী ৮ বছর প্রতিদিন পরিশ্রম করে ১৫৭৩ সালে আগ্রা দুর্গের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করে।

সম্রাট আকবরের পৌত্র সম্রাট শাহজাহানের আমলে আগ্রা দুর্গ তার বর্তমান রূপ লাভ করে। শাহাজাহান লাল বেলেপাথরের নির্মিত ইামারতের চেয়ে শ্বেত পাথর দ্বারা নির্মিত ভবন অধিকতর পছন্দ করতেন।

১৮ শতকের প্রথম দিকে মারাঠা সম্রাট দুর্গটি দখল করেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে মারাঠা ও তাদের শত্রুরা আগ্রা দুর্গের নিয়ন্ত্রন গ্রহণ করে। ১৭৬১ সালেআহমেদ শাহ আবদালি পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধেমারাঠাদের পরাজিত করলে পরবর্তী এক দশক মারাঠারা এই দুর্গ দখলের কোন চেষ্টা করতে পারেনি।

১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহের সময়ে এই দুর্গে দেশীয় সিপাহী ও ইংরেজ সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়

No comments:

Post a Comment