Friday, 9 February 2018

মীরজাফর




খুব আশ্চর্য্য হয়েছিলাম মুর্শিদাবাদে, যখন দেখলাম মীরজাফরকে ওখানকার লোক সিরাজের সমান সন্মান দিচ্ছে। একজনগাইড তো রিতীমত গর্জে উঠলেন,—“ওনাকে খারাপ বলবেন না। নবাব সীরাজৌদ্দলার বদলে যদি উনি নবাব হতেন তাহলে বাংলার এই অবস্থা  হতো না, ইংরেজ বাংলা নিতেই পারতোনা”। বলে কি লোকটা মীরজাফর খারাপ ছিলনা! মুর্শিদাবাদের ইতিহাস পরা শুরু করলাম।

আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে অত্যন্ত আদর দীয়ে এক প্রকার বাঁদরই তৈরী করেছিলেন এবং শাষক হতে গেলে একজন মানুষের মধ্যে যে গুনগুলি থাকা দরকার তার সবকটি সিরাজের মধ্যে ছিল অনুপস্থিত। আলিবর্দী খাঁ সিরাজকে তাঁর লাকী চার্ম মনে করতেন তাই সিরাজকে দুধে-ভাতে রাখতেন। ফলে সিরাজের রাজ্য,শাষক,শাসন,কুটনিতী — এসব সম্বন্ধে কোনও ধারনাই তৈরী  হয়নি। অন্যদিকে মীরজাফরও আলিবর্দীর আত্মীয় ছিলেন। অত্যন্ত কমবয়স থেকেই তিনি শাসন সংক্রান্ত ব্যাপারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন,কুটনীতি বিষয়ে পারদর্শী ছিলেন। আলিবর্দী খাঁ যখন মারাঠা দস্যুদের নিয়ে নাকানিচোবানি খাচ্ছেন সেই সময় কিনতু মীরজাফর তিন মারাঠা দস্যু অর্থ্যাৎ বর্গী নেতাকে হত্যা করে পিছু হটতে বাধ্য করেন। সেই সময় সিরাজ কিন্তু ছিলেন বিলাসব্যসনে মত্ত।
যদি বংশ পরিচয় এবং রাজকিয় রক্ত নবাবী সিংহাসনের দাবীদার হয় তাহলেও সিরাজ পিছিয়ে ছিলেন। মীরজাফর ছিলেন ঈসলাম ধর্মের প্রবর্তক হজরত মহম্মদের নাতি। মীরজাফরের পিতা হুসেন নাজাফি ছিলেন মক্কায় হজরত মহম্মদের সমাধির কেয়ারটেকার। সম্রাট ঔরঙ্গজেব যখন মক্কা সরিফ যান তখন হুসেন নাজাফির সাথে আলাপ হয়। সম্রাট হুসেনের অগাধ জ্ঞান দেখে অভিভুত হয়ে তাকে দিল্লী নিয়ে আসেন এবং দেশের সর্বচ্চ আদালতের মুখ্য বিচারক পদে বহাল করেন। হুসেন নাজাফি সম্রাট শাহজাহানের বড় পুত্র তথা ঔরঙ্গজেবের বড় ভাই দারা শিখোর কন্যাকে বিবাহ করেন এবং তাদের সন্তান হলেন মীরজাফর । মীরজাফর আবার আলিবর্দী খাঁর ভাগ্নীকে বিবাহ করেন

যাইহোক সিরাজের চরিত্রে দৃঢ়তার খুবই অভাব ছিল। সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পেতেন। কুটনিতীজ্ঞ একেবারেই ছিলেন না। উনি  ওনার রাজসভায় হিন্দুদের প্রাধান্য দিয়ে ফেলায় ওনার নিজের সম্প্রদায়ের মানুষরা বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়ে পড়ল। আর সেই সুযোগে জগৎশেঠ, উমিচাঁদের মত সার্থপর লোকেরা বাংলা লুটেপুটে খেতে লাগল। শুধু মীরজাফর নন অনেক অভিজ্ঞজনই তখন মনে করছিলেন বাংলাকে বাঁচানোর জন্য সিরাজের পতন অবশ্যম্ভাবী।

সিরাজের প্রতি মীরজাফরের কোনও ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিলনা। সিরাজ ধরা পরার পর যখন মীরজাফরের পুত্র মীরমিরাণ তাঁকে প্রাণদন্ড দেবার জন্য দরবারে প্রস্তাব উথ্থাপন করেন। মীরজাফর কোনও উত্তর দেননি। পরে রাতেয় অন্ধকারে মীরজাফর বিশ্রাম নিতে চলে যাবার পর মীরমিরানের নির্দেশে মহম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করেন এবং পরেরদিন সকালে সিরাজের দেহটুকরো গুলি হাতির পিঠে চেপে সারা মুর্শিদাবাদ ছড়ায়। খবর পেয়ে সিরাজের মা আমিনা বেগম সেই টুকরো একত্র করে খোসবাগে সমাধিস্থ করেন।
মীরান তার সিংহাসনে বসার পথ পরিস্কার করার জন্য সিরাজের ১১ বছরের ভাই মিরমেহেদী এবং আরএক ভাইপো মুরাদ্দৌল্লাকেও হত্যা করে।

‘নেমকহারাম ’ এই তকমাটাইংরেজদেরই দেওয়া কারন ইংরেজ জানতো মীরজাফর মনে মনে চাননি।  শুধুমাত্র  চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিলেন। নেমকহারাম যে ছিলেন না তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ ইংরেজরা তাঁকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। বিশ্বাসঘাতককে বাঁচিয়ে রাখা ইংরেজের স্বভাব বিরুদ্ধ।

No comments:

Post a Comment