Tuesday, 22 November 2016

ভুত না অদ্ভূত পর্ব-৪

অফিসে ঢুকে থেকে এইসব কিছু নিয়েই ভাবছিল অভ্র। দু-দুবার মারাত্মক ভুল হতে গিয়ে বাঁচল মতিনের সাহায্যে। একটু সুযোগ পেয়ে মতিন জিগ্গেস করলো কি হয়েছে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে অভ্র সব ঘটনা বলল। বাড়ী ফেরার পথে গাড়িতে মতিন বলল,“তুই তোরঙ্গটা খোল। না খুললে এসব হতেই থাকবে। কোনও অতৃপ্ত আত্মা তোকে ওটা খুলতে বলছে। নিশ্চই ওর মধ্যে এমন কিছু আছে যেটা তোর জানাটা দরকার”

আজও খাবার তৈরী ছিল। কিন্তু আজ অভ্র নন্দকে পয়সা দিল। নন্দ কিছুতেই নেবেনা। অভ্র বলল, “আমি তো তোমায় খাবারের দাম দিচ্ছিনা! তুমি কাল থেকে আমার জন্য রুটিটা কিনে রেখো”

লিফটের কাছাকাছি আসতেই একটা উত্তেজনা হতে থাকে, আজ আবার নতুন কি ঘটতে চলেছে কে বলতে পারে।অভ্র কি ভয় পাচ্ছে! আর তখনই অভ্র বুঝতে পারলো লিফটের মধ্যে সে একা নেই। তার পাশে কে একজন দাঁড়িয়ে। অভ্র চকিতে ডান পাশে তাকালো।  নাহ্ কেউ নেই শুধু ঘাড়ের কাছে একটা কিছুর অস্তিত্বের অনুভুতি। অভ্র খুব গর্বের সাথে নিজেকে সাহসী বলে পরিচয় দিত। আজ কি তাহলে সেই জন্য এই অবস্থায় পড়লো! মনে মনে শুধু প্রমাদ গুনতে লাগলো। লিফটের দরজা খুলতেই যেন এতক্ষণের আটকে থাকা নিশ্বাসটা পড়লো। মনে হল পিছনে কেউ যেন ফ্যাসফ্যাসে গলায় হাসছে। মনের ভুলই হবে হয়তো। তালা খুলে ঘরে ঢুকে আলো জ্বালালো অভ্র। আলো জ্বালতেই তোরঙ্গটার দিকে চোখ পড়লো অভ্রর। তখনই মনে পড়লো নীচে নন্দ বলছিল ওই তোরঙ্গটার চাবি নাকি পুলিশ কোনভাবেই পায়নি। তালাটা ভাঙ্গতে চেষ্টা করেও অসফল হয়ে কেস বন্ধ করে দিয়েছিল। নন্দর বক্তব্য অনুযায়ী ঐ আত্মাটা চাইছে যে অভ্র তোরঙ্গটা খুলুক। অভ্র আর কোনও কিছু না ভেবে চাবিটা দিয়ে তালাটা খুলে ফেলল। ওপরের ডালাটা খুলে বেশ অবাক হল। একটা পুরোনো খাতা আর দুটো ছোট ছোট পুঁটুলি ছাড়া কিছুই নেই। একটা পুঁটুলিতে ছোটবড় সোনা রূপার মোহর আর আরএকটাতে রঙবেরঙের কাচের টুকরোতে ভর্তি। খাতাটা খুলে বুঝলো এটা একটা ডাইরি। কিন্তু ভাষাটা যে কি বোঝা গেলো না, সম্ভবতঃ ইটালী। কাচের টুকরো গুলো আর কিছুই নয় হীরে জহরত। কিন্তু এগুলো এখানে কেন। এগুলো পাইয়ে দেবার জন্য ভুত বা আত্মা যাইহোক এতকিছু করলো কেন!তবে কি এই ডাইরিতে কিছুকি এমন লেখা আছে যেটা জানা দরকার? কিন্তু এতো ইটালী বুঝবে কি করে?এইসব নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতেই ঘুমিয়ে পরলো অভ্র।

চলবে

ভুত না অদ্ভূত পর্ব-৩

ঘুম যখন ভাঙ্গল তখন সূর্য মাথার ওপর। অভ্র হাত বাড়িয়ে হাত ঘড়িতে সময় দেখলো সাড়ে বারোটা। ঘড়িটা জায়গা মত রাখতে গিয়ে কাল রাতে পাওয়া চাবিটা চোখে পড়লো। তবে কি এই চাবিটা ওই তোরঙ্গটার তালার চাবি? কে বার করলো এই চাবি? তবে কি সত্যিই কোনও মানুষ ঢুকেছিল ফ্ল্যাটে। কিন্তু কে!!

এইসব ভাবতে ভাবতে বসার ঘরে এসে দাঁড়ালো অভ্র যেখানে কাল রাতে আলমারির সব জিনিস ইতস্ততঃ ছড়ানো ছিল। আর ঢুকেই চমকে গেল সেখানে কিচ্ছু ছড়ানো নেই। অভ্র দ্রুত আলমারি খুলল। সব কিছু গোছানো, যেমন গুছিয়ে রেখেছিল। তবে কি ও স্বপ্ন দেখেছিল?তাহলে এই চাবি,এটা কোথা থেকে এল! মাথার মধ্যে সব পাকিয়ে যাচ্ছিল। অভ্র মুখ হাত ধুয়ে কফি করলো। বাজার কিছু ছিলনা তাই ডিম আর আলু দিয়ে ভাত বসিয়ে কফি নিয়ে বসার ঘরে এসে বসলো। একমনে ঐ তোরঙ্গটা দেখতে লাগলো অভ্র। পুলিশ কেন তোরঙ্গটা খোলেনি। নাকি খুলেছিল? প্রশ্নটা মাথার মধ্যে ঘুরতে লাগলো। একবার মনে হল তোরঙ্গটা খুলে দেখবে। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হল,কি হবে খুলে। ভাত হয়ে গিয়েছিল। স্নান সেরে গরম-গরম ভাত খেয়ে তৈরী  হয়ে নিল। অফিসের গাড়ী কাছাকাছি  এলে ড্রাইভার মিসড কল দেবে। অভ্র বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াল। নীচের লোকগুলো পিঁপড়ের মত লাগে। সামনেটা পুরো ফাঁকা। হুহু করে হাওয়া দিচ্ছিল। বারান্দায় রেলিং আছে কিন্তু বক্স গ্রীল নেই। হাওয়ার ঠেলায় মনে হচ্ছিল পরে যাবে নীচে। ঠিক সেই সময় সদর দরজায় কলিংবেল বেজে উঠলো। এই ভর দুপুরে কে এল! এখানে তো কাউকে সে চেনেই না। আর কেউও তাকে চেনে বলে মনে হয়না। এই ফ্লোরে আর একটা ফ্ল্যাট আছে বটে কিন্তু তার বাসিন্দা তো শুনেছি আমেরিকা না কোথায় যেন একটা থাকে। অভ্র ম্যাজিক-আইতে চোখ লাগাতেই একটা ভয়ঙ্কর  চোখ দেখতে পেল। চোখটা যেন ম্যাজিক-আইয়ের ওপাশ থেকে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। চকিতে এই দৃশ্যে তার প্রাণবায়ু উড়ে গেল। ছিটকে সড়ে এল দরজার পাশ থেকে পরক্ষণেই মনে হল,ধুর মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তার! দরজার ছিটকিনিতে হাত দিতে যাবে তখনই ফোন বেজে উঠলো, গাড়ী এসে গেছে। দরকারি জিনিসপত্র নিয়ে বেরিয়ে এল অভ্র। অফিসের তাড়ায় ভুলেই গেল যে একটু আগে কি ঘটেছিল। লিফ্‌ট থেকে নেমে বেশ অনেকখানি  হেঁটে তারপর মেনগেট। গেটের কাছাকাছি যেতেই দিনের গার্ডটা বেরিয়ে এল “দাদা বেড়চ্ছো?”।  ওকে দেখে একটু আগের ঘটনাটা মনে পড়ে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো। অভ্র ঘটনাটার কথা আদ্যপান্ত ওকে বলল। লক্ষ্য করছিল ওর মুখের আর চোখের দৃষ্টির পরিবর্তন। “এরকম কখনও আবার হলে দরজা খুলবে না,যা কিছু হোক”
অভ্র মৃদু হেসে বলল, “কোনও আত্মা হলে কি সে আমার দরজা খোলার অপেক্ষা করবে?”
—“করবে দাদা। আমি বোঝাতে পারবোনা। শুধু যা বললাম তাই-ই করবে”
ঠিক তখনই অফিসের গাড়ী এসে দাঁড়ালো গেটের বাইরে।

চলবে

Saturday, 12 November 2016

ভুত না অদ্ভূত! পর্ব—২

পরের দিন বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত তিনটে। অফিসের গাড়ী এসে যখন নামিয়ে দিয়ে গেল তখন সোসাইটি সামনের বন্ধ গেটের ওপারে ঢুলছিল। অভ্র আগেই বলে গিয়েছিল তার ফিরতে রাত হবে। গেটে প্রবালের আংটি পড়া হাত লাগতেই আওয়াজ হল। আর গার্ড চোখ খুলে তাকালো। অভ্রকে দেখে খুব তৎপর হয়ে গেট খুলে দিল। অভ্র নিজের উইঙ্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল গার্ডটা ডাকলো “দাদাবাবু”। অভ্র ঘুরে দাঁড়াতেই জিগ্গেস করলো “খেয়ে এসেছেন”। গার্ডটা তারই বয়সি। হয়ত সেইকারনেই একা থাকার সমস্যাটা বোঝে। অভ্র ঠিক করেছে এখন আর কিইবা করবে ম্যাগী বানিয়ে খেয়ে নেবে। গার্ডের কথায় তাই ঘাড় কাৎ করে ‘হ্যা’ বলল। কি দরকার ওকে ওতো কথা বলার।
“আমি বলি কি, আজ বউয়ের বানানো মাংসের ঝোল আছে। খুচরো ছিলনা বলে দোকান থেকে তিনটা রুটি বেশী কিনতে হয়েছিল। আজ সেটুকুই খেয়ে নিন কাল নাহয় কিছু ব্যবস্থা করে নেবেন!”
অচেনা জায়গায় চেনার ছোঁয়া পেলে মনটা ভারী হয়ে যায়। অভ্রকে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে দেখে ও তৎপর হয়ে পড়লো। ভিতর থেকে টুল আর চেয়ার এনে হটপট খুলে খাবার সাজিয়ে দিল। খাবার দেখে এবার খিদে চাগিয়ে উঠলো। চেয়ারে বসতে বসতে বলল,“খেতে পারি একটা শর্তে দাদাবাবু না বলে যদি অভ্র দাদা বলো”। কথায় কথায় জানা গেল ও হল রাতের গার্ড,নাম নন্দ। সদ্য বিয়ে করেছে। বউয়ের রান্নার হাত খুব ভাল। রোজ গাদা রান্না করে টিফিন কৌটতে ভোরে দেয়। অত ও খেতে পারেনা। রোজই ফেলে দেয় নয়তো জোর করে খায়। আজ ফেলতে গিয়ে মনে হল অভ্রর কথা তাই ইচ্ছা করেই বেশী রুটি কিনেছিল। অভ্রর মন ভরে গেল। সত্যি বউটার রান্নার হাত দারুন।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে উপরে উঠে এল। দরজা খুলে ঘরে ঢুকেই মাথাটা ঘুরে গেল। সারা ফ্ল্যাটে কাপড়জামা বেডকভার টাওয়েল চটি ছড়ানো ছিটানো। প্রচন্ড বিরক্তিতে মাথা গরম হয়ে গেল। নিশ্চই ফ্ল্যটে কেউ ঢুকেছিল। এক্ষুনি নন্দকে জানাতে হবে। ইন্টারকমের দিকে হাত বাড়িয়েও থমকে গেল অভ্র। দালাল বলেছিল ভুতের ভয়ে কেউ এই ফ্ল্যাটের আশপাশ মাড়ায়না। বুঝতে বাকী থাকেনা এসব কার দ্বারা মানে কিসের দ্বারা হয়েছে। ঘড়িতৈ পৌনে চারটে। ঘুমে চোখ জুরে আসছে। অভ্র ভাবলো এখন ঘুমাই সকালে উঠে পরিস্কার করবো। সাবধানে অগোছাল জিনিষ টপকে আসার সময় পায়ের তলায় শক্ত কি একটা পড়লো। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো অভ্র।  ফাকা ঘরে সেটা আর্তনাদের মত শোনালো। পায়ের তলায় হাত দিয়ে হাতে পেল একটা চাবি। মধ্যযুগীয় স্টাইলের চাবিটা হাতে নিয়েই নিজের অজান্তে চোখ চলে গেল বন্ধ তোরঙ্গটার দিকে।

চলবে

Friday, 4 November 2016

ভুত না অদ্ভুত ! পর্ব-১

কোনও অলৌকিক ব্যাপার বা ভৌতিক ব্যাপার বিশ্বাস করে না অভ্র। তাই যখন দালালের কাছে এই ফ্ল্যাটের কথা শুনলো এতটুকু চিন্তা না করে ফ্ল্যাট টা নিয়েই নিল। দালালটাকে ভাল বলতে হবে কোনও কিছু গোপন করেনি। বলেছে এই ফ্ল্যাট টা কিনেছিলেন একজন ফরাসী দোভাষী। একদিন সকালে হঠাৎ করেই আবিস্কার করা হল কেউ তাকে খুন করে রেখে গেছে। মনে হয় লোকটার তিনকুলে কেউ ছিলনা তাই কেউ আর খোঁজ করেনি। পরে পুলিশ তাকে কবর দিয়ে দেয়। কিন্তু তার পর থেকেই শুরু হয় এই ফ্ল্যাটে উৎপাত । আজ পর্য্যন্ত কম করে পনেরোটা ফ্যামিলী এক রাত থেকেই পালিয়েছে।
অভ্রর উপায় নেই। বাবার পেটে টিউমারটা ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপারেসন করা দরকার। বোন এমএ পড়ছে। ওর বিয়ের কথাও তো ভাবতে হবে!বলছে বিএড করবে। তারও একটা খরচ আছে। এইসব চিন্তার মধ্যে কলসেন্টারের কাজটা পেয়ে গেল। ভাল মাইনের লোভ  সামলাতে পারলোনা। কয়েক মাস মেসে থেকে সুবিধার থেকে অসুবিধাই বেশী হল। তাই খুব সস্তায় এই ফ্ল্যাট টা ভাড়া পেয়ে যেন স্বর্গ পেল হাতে। আসবাব মোটামুটি ছিলই। যেমন একটা বেশ বড় তক্তপোষ একটা আলমারি  একটা টেবিল ও চেয়ার। এগুলির পালিশ ও ডিজাইনে পুরোনো মধ্যযুগীয় ছাপ রয়েছে। এসব ছাড়া ছিল একটা বড় তোরঙ্গ। যেটা ছিল তালা বন্ধ। চাবি জানা নেই কোথায়। অভ্র ভাবলো কি হবে আর কৌতুহল দেখিয়ে। ইভনিং শিপ্ট,অবশ্য সেটা নামেই রোজই প্রায় বাড়ী ফিরতে ভোর চারটে হয়। ঐ জন্য অফিসের সামনের এই বাসস্থান পছন্দ করলো। আজ অফ ছিল বলে আজই শিফ্টিং টা করে নিল। সবকিছু গুছিয়ে বসতে বসতেই রাত নটা হয়ে গেল। কমপ্লেক্সের বাইরে রুটি আর তরকার দোকান থেকে খাবার কিনে নিয়ে এসেছিল। খাওয়া দাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি শুয়েও পড়লো।
রাত তখন কটা হবে খেয়াল নেই হঠাৎ  ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশ ফিরতে গিয়ে পাশের খোলা জানলায় চোখ পড়লো। একজন অভ্রর দিকেই তাকিয়ে আছে। যত্তসব জ্বালা!আগের বাড়ীটাতেও এইসব ঝামেলা ছিল। জানলা খোলা থাকলেই কেউনা কেউ উঁকি  মেরে দেখতো। ওটা না হয় কলোনি এলাকা ছিল,এখানেও এইসব আছে! বিরক্তিতে মুখ ঘুরিয়ে চোখ বুজলো অভ্র। আর তখনই মনে পড়লো, অভ্র’র ফ্ল্যাট টা ১৫ তলায়। প্রবল অস্বস্তি নিয়ে সারাটা রাত আর ঘুমাতেই পারলোনা অভ্র।

   

Wednesday, 2 November 2016

দানব

জানলাটা খুলতেই যতরাজ্যের বিরক্তি রিমার মনে উপস্থিত হল। আজও সামনের ফ্ল্যাটের জানলা খোলা আর ভেতরে দানবগুলো ঘোরাফেরা করছে। এই গরমে জানলা বন্ধ করে থাকা কোনমতেই সম্ভব নয়। গত কয়েকদিন হল সামনের ফ্ল্যাটের তিন তলায় তিনটে নাইজেরিয়ান ভাড়া নিয়ে এসেছে।  দানবের মত চেহারা,গায়ের রঙ মিশকালো। কলকাতায় এখন এই নাইজেরিয়ান গুলোকে নিয়ে আসে আর একটু ট্রেনিং দিয়ে ফুটবল মাঠে নামিয়ে দেয়। অমানুষিক শক্তি এদের। আমাদের ভারতীয়রা এদের সাথে পেরে ওঠে না। তাই একটা ফুটবল টিমে একটি এই দানব থাকলে তো চিন্তাই নেই। তবে ওদের ঐচেহারা সাধারণ মানুষের ভীতির কারণ। এমনিতে নাইজেরিয়া দেশটা খুব গরীব। বিশ্বের বহুদেশ তাদের গায়ের রঙের গরিমায় এদেরকে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজে নিজুক্ত করে। সেই অভিমানেই এরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। আর  সাধারন মানুষ এইকারনে এদেরকে বেশ ভয়ের চোখেই দেখি। এইসব চিন্তায় যখন মগ্ন রিমা দেখলো সামনের ফ্ল্যটের এদিকের জানলাগুলো বন্ধ হয়ে গেল। রিমা মনে মনে বেশ অবাকই হল। ভেবেছিল ওরা ইচ্ছাকরে হয়তো এদিকের জানলা খুলে রাখে রিমাকে দেখার জন্য।

পরেরদিন আবার রিমা জানলা খোলার কিছুক্ষণ  পরে ওদের জানলা বন্ধ হয়ে গেল।  আহা!ন্যাকামি! ভালোমানুষি দেখানো হচ্ছে!তোমাদের শয়তানি যেন বুঝিনা!এইভাবে মাস ছয়েক কেটে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও ওদের কোনও শয়তানি রিমা আবিস্কার করতে পারেনি। নিজের কাজের থেকে বেশী ওদের ওপর নজর রাখে রিমা। একটা সময় নিজের রোজকার কাজে ডুবে গেল রিমা। ওদের কথা ভুলেও গেল।

এরমধ্যে একদিন হঠাৎ  দীপ্তর প্রচন্ড জ্বর এলো।সারারাত  ছটফট করে ভোরবেলা রিমাকে ডেকে তোলে “বাড়ীতে ক্রোসিন থাকলে দাও”।  রিমা গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা পুড়ে যাচ্ছে। ক্রোসিনও আছে মাত্র একটা। আপাততঃ সেটাই দিল দীপ্তকে। বেলার দিকে বেড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু চিন্তার বিষয় এটাই যে আজ বন্ধ্!
সকাল ন’টার দিকে আবার তরতরিয়ে জ্বর উঠতে শুরু করলো। থার্মোমিটারে ১০৩ ছুঁইছুঁই। দীপ্ত ভুল বকতে শুরু করেছে। আর ঘরে বসে থাকা যায়না। ডঃরায়চৌধুরির ফোন অফ। বড়রাস্তার কোনদিকে ওনার বাড়ী রিমার জানা। বাড়ী থেকে আনার জন্য বেড়ীয়ে পড়লো রীমা। অনেক কষ্টে একটা রিকসাও পেয়ে গেল। কিন্তু সে বড় রাস্তা যাবেনা সেখানে ঝামেলা হচ্ছে। কিন্তু রিমাকে তো যেতেই হবে। বড় রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা দুরে রিক্সাওলা থেমে গেল। ভাড়া মিটিয়ে রিমা এগিয়ে চলল। কাছাকাছি যেতেই দুটো চ্যাংরা ছেলে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো “ কি ব্যাপার?” সবশুনে ওরা সড়ে রিমার যাওয়ার রাস্তা করে দিল। ঠিক তখনই বিরোধী পক্ষের পতাকা লাগানো একটা গাড়ি ঢুকতেই বেঁধে গেল গোলযোগ। দুই পক্ষের মারামারির মাঝখানে পরে দিশেহারা। ঠিক সেই সময় একটা ছেলে তেড়ে এল ওর দিকে। রিমা চোখ বুজে ফেলল ভয়ে। আজ বোধহয় সে বাঁচবে না। ঠিক সেই সময়ই একটা  দানব লাফিয়ে পড়লো সামনে। ওর বিশাল চেহারা দেখে ছেলেটা থমকে গেল। দানবটা একটা হুংকার দিতেই ছেলেটা উলটো দিকে দৌড় লাগাল। দানবটা এক ঝটকায় রিমাকে সোজা করে দাঁড় করালো।  রিমা ভালোকরে তাকিয়ে দেখলো এত ওদের সামনের ফ্লাটের সেই তিনটে দানবের একটা!। বাকী দুটো একটু দুরে দাঁড়ানো। রিমা উঠে দাঁড়াতে বাকী দুটো এগিয়ে এল। রিমার পরিত্রাতা ধমকে উঠলো “হোয়াৎ আর ইউ দুয়িং হেয়ার ইন দিচ ক্যায়োচ”। রিমা অসহায়ের মত তার কথা জানালো। পরিত্রাতা তার স্বজাতিকে নিজস্ব ভাষায় সব বলল। ওরা তার উত্তরে কিছু বলতেই সে প্রশ্ন করলো,“হোয়্যার ইজ ইয়োর ডক্তর”। রিমা ইসারায় দেখাতেই সে বলল “লেতচ গো”। ডাঃ রায়চৌধুরি দানবগুলোকে দেখেই বোধহয় আর প্রতিবাদ করলেন না। ওরা বাড়ী পর্য্যন্ত পিছু পিছু এল। যাবার সময় একটা কাগজে লেখা মোবাইল  নাম্বার দিয়ে ইশারায় বলল দরকারহলে যেন ফোন করে রিমা। কোনও উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওরা চলে গেল।