Wednesday, 2 November 2016

দানব

জানলাটা খুলতেই যতরাজ্যের বিরক্তি রিমার মনে উপস্থিত হল। আজও সামনের ফ্ল্যাটের জানলা খোলা আর ভেতরে দানবগুলো ঘোরাফেরা করছে। এই গরমে জানলা বন্ধ করে থাকা কোনমতেই সম্ভব নয়। গত কয়েকদিন হল সামনের ফ্ল্যাটের তিন তলায় তিনটে নাইজেরিয়ান ভাড়া নিয়ে এসেছে।  দানবের মত চেহারা,গায়ের রঙ মিশকালো। কলকাতায় এখন এই নাইজেরিয়ান গুলোকে নিয়ে আসে আর একটু ট্রেনিং দিয়ে ফুটবল মাঠে নামিয়ে দেয়। অমানুষিক শক্তি এদের। আমাদের ভারতীয়রা এদের সাথে পেরে ওঠে না। তাই একটা ফুটবল টিমে একটি এই দানব থাকলে তো চিন্তাই নেই। তবে ওদের ঐচেহারা সাধারণ মানুষের ভীতির কারণ। এমনিতে নাইজেরিয়া দেশটা খুব গরীব। বিশ্বের বহুদেশ তাদের গায়ের রঙের গরিমায় এদেরকে অত্যন্ত নিম্নমানের কাজে নিজুক্ত করে। সেই অভিমানেই এরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজে লিপ্ত হয়। আর  সাধারন মানুষ এইকারনে এদেরকে বেশ ভয়ের চোখেই দেখি। এইসব চিন্তায় যখন মগ্ন রিমা দেখলো সামনের ফ্ল্যটের এদিকের জানলাগুলো বন্ধ হয়ে গেল। রিমা মনে মনে বেশ অবাকই হল। ভেবেছিল ওরা ইচ্ছাকরে হয়তো এদিকের জানলা খুলে রাখে রিমাকে দেখার জন্য।

পরেরদিন আবার রিমা জানলা খোলার কিছুক্ষণ  পরে ওদের জানলা বন্ধ হয়ে গেল।  আহা!ন্যাকামি! ভালোমানুষি দেখানো হচ্ছে!তোমাদের শয়তানি যেন বুঝিনা!এইভাবে মাস ছয়েক কেটে গেছে। অনেক চেষ্টা করেও ওদের কোনও শয়তানি রিমা আবিস্কার করতে পারেনি। নিজের কাজের থেকে বেশী ওদের ওপর নজর রাখে রিমা। একটা সময় নিজের রোজকার কাজে ডুবে গেল রিমা। ওদের কথা ভুলেও গেল।

এরমধ্যে একদিন হঠাৎ  দীপ্তর প্রচন্ড জ্বর এলো।সারারাত  ছটফট করে ভোরবেলা রিমাকে ডেকে তোলে “বাড়ীতে ক্রোসিন থাকলে দাও”।  রিমা গায়ে হাত দিয়ে দেখে গা পুড়ে যাচ্ছে। ক্রোসিনও আছে মাত্র একটা। আপাততঃ সেটাই দিল দীপ্তকে। বেলার দিকে বেড়িয়ে নিয়ে আসতে হবে। কিন্তু চিন্তার বিষয় এটাই যে আজ বন্ধ্!
সকাল ন’টার দিকে আবার তরতরিয়ে জ্বর উঠতে শুরু করলো। থার্মোমিটারে ১০৩ ছুঁইছুঁই। দীপ্ত ভুল বকতে শুরু করেছে। আর ঘরে বসে থাকা যায়না। ডঃরায়চৌধুরির ফোন অফ। বড়রাস্তার কোনদিকে ওনার বাড়ী রিমার জানা। বাড়ী থেকে আনার জন্য বেড়ীয়ে পড়লো রীমা। অনেক কষ্টে একটা রিকসাও পেয়ে গেল। কিন্তু সে বড় রাস্তা যাবেনা সেখানে ঝামেলা হচ্ছে। কিন্তু রিমাকে তো যেতেই হবে। বড় রাস্তা থেকে বেশ খানিকটা দুরে রিক্সাওলা থেমে গেল। ভাড়া মিটিয়ে রিমা এগিয়ে চলল। কাছাকাছি যেতেই দুটো চ্যাংরা ছেলে এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলো “ কি ব্যাপার?” সবশুনে ওরা সড়ে রিমার যাওয়ার রাস্তা করে দিল। ঠিক তখনই বিরোধী পক্ষের পতাকা লাগানো একটা গাড়ি ঢুকতেই বেঁধে গেল গোলযোগ। দুই পক্ষের মারামারির মাঝখানে পরে দিশেহারা। ঠিক সেই সময় একটা ছেলে তেড়ে এল ওর দিকে। রিমা চোখ বুজে ফেলল ভয়ে। আজ বোধহয় সে বাঁচবে না। ঠিক সেই সময়ই একটা  দানব লাফিয়ে পড়লো সামনে। ওর বিশাল চেহারা দেখে ছেলেটা থমকে গেল। দানবটা একটা হুংকার দিতেই ছেলেটা উলটো দিকে দৌড় লাগাল। দানবটা এক ঝটকায় রিমাকে সোজা করে দাঁড় করালো।  রিমা ভালোকরে তাকিয়ে দেখলো এত ওদের সামনের ফ্লাটের সেই তিনটে দানবের একটা!। বাকী দুটো একটু দুরে দাঁড়ানো। রিমা উঠে দাঁড়াতে বাকী দুটো এগিয়ে এল। রিমার পরিত্রাতা ধমকে উঠলো “হোয়াৎ আর ইউ দুয়িং হেয়ার ইন দিচ ক্যায়োচ”। রিমা অসহায়ের মত তার কথা জানালো। পরিত্রাতা তার স্বজাতিকে নিজস্ব ভাষায় সব বলল। ওরা তার উত্তরে কিছু বলতেই সে প্রশ্ন করলো,“হোয়্যার ইজ ইয়োর ডক্তর”। রিমা ইসারায় দেখাতেই সে বলল “লেতচ গো”। ডাঃ রায়চৌধুরি দানবগুলোকে দেখেই বোধহয় আর প্রতিবাদ করলেন না। ওরা বাড়ী পর্য্যন্ত পিছু পিছু এল। যাবার সময় একটা কাগজে লেখা মোবাইল  নাম্বার দিয়ে ইশারায় বলল দরকারহলে যেন ফোন করে রিমা। কোনও উত্তরের অপেক্ষা না করেই ওরা চলে গেল।

No comments:

Post a Comment