Saturday, 12 November 2016

ভুত না অদ্ভূত! পর্ব—২

পরের দিন বাড়ী ফিরতে ফিরতে প্রায় রাত তিনটে। অফিসের গাড়ী এসে যখন নামিয়ে দিয়ে গেল তখন সোসাইটি সামনের বন্ধ গেটের ওপারে ঢুলছিল। অভ্র আগেই বলে গিয়েছিল তার ফিরতে রাত হবে। গেটে প্রবালের আংটি পড়া হাত লাগতেই আওয়াজ হল। আর গার্ড চোখ খুলে তাকালো। অভ্রকে দেখে খুব তৎপর হয়ে গেট খুলে দিল। অভ্র নিজের উইঙ্গের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল গার্ডটা ডাকলো “দাদাবাবু”। অভ্র ঘুরে দাঁড়াতেই জিগ্গেস করলো “খেয়ে এসেছেন”। গার্ডটা তারই বয়সি। হয়ত সেইকারনেই একা থাকার সমস্যাটা বোঝে। অভ্র ঠিক করেছে এখন আর কিইবা করবে ম্যাগী বানিয়ে খেয়ে নেবে। গার্ডের কথায় তাই ঘাড় কাৎ করে ‘হ্যা’ বলল। কি দরকার ওকে ওতো কথা বলার।
“আমি বলি কি, আজ বউয়ের বানানো মাংসের ঝোল আছে। খুচরো ছিলনা বলে দোকান থেকে তিনটা রুটি বেশী কিনতে হয়েছিল। আজ সেটুকুই খেয়ে নিন কাল নাহয় কিছু ব্যবস্থা করে নেবেন!”
অচেনা জায়গায় চেনার ছোঁয়া পেলে মনটা ভারী হয়ে যায়। অভ্রকে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতে দেখে ও তৎপর হয়ে পড়লো। ভিতর থেকে টুল আর চেয়ার এনে হটপট খুলে খাবার সাজিয়ে দিল। খাবার দেখে এবার খিদে চাগিয়ে উঠলো। চেয়ারে বসতে বসতে বলল,“খেতে পারি একটা শর্তে দাদাবাবু না বলে যদি অভ্র দাদা বলো”। কথায় কথায় জানা গেল ও হল রাতের গার্ড,নাম নন্দ। সদ্য বিয়ে করেছে। বউয়ের রান্নার হাত খুব ভাল। রোজ গাদা রান্না করে টিফিন কৌটতে ভোরে দেয়। অত ও খেতে পারেনা। রোজই ফেলে দেয় নয়তো জোর করে খায়। আজ ফেলতে গিয়ে মনে হল অভ্রর কথা তাই ইচ্ছা করেই বেশী রুটি কিনেছিল। অভ্রর মন ভরে গেল। সত্যি বউটার রান্নার হাত দারুন।
খাওয়া দাওয়া শেষ করে উপরে উঠে এল। দরজা খুলে ঘরে ঢুকেই মাথাটা ঘুরে গেল। সারা ফ্ল্যাটে কাপড়জামা বেডকভার টাওয়েল চটি ছড়ানো ছিটানো। প্রচন্ড বিরক্তিতে মাথা গরম হয়ে গেল। নিশ্চই ফ্ল্যটে কেউ ঢুকেছিল। এক্ষুনি নন্দকে জানাতে হবে। ইন্টারকমের দিকে হাত বাড়িয়েও থমকে গেল অভ্র। দালাল বলেছিল ভুতের ভয়ে কেউ এই ফ্ল্যাটের আশপাশ মাড়ায়না। বুঝতে বাকী থাকেনা এসব কার দ্বারা মানে কিসের দ্বারা হয়েছে। ঘড়িতৈ পৌনে চারটে। ঘুমে চোখ জুরে আসছে। অভ্র ভাবলো এখন ঘুমাই সকালে উঠে পরিস্কার করবো। সাবধানে অগোছাল জিনিষ টপকে আসার সময় পায়ের তলায় শক্ত কি একটা পড়লো। ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো অভ্র।  ফাকা ঘরে সেটা আর্তনাদের মত শোনালো। পায়ের তলায় হাত দিয়ে হাতে পেল একটা চাবি। মধ্যযুগীয় স্টাইলের চাবিটা হাতে নিয়েই নিজের অজান্তে চোখ চলে গেল বন্ধ তোরঙ্গটার দিকে।

চলবে

No comments:

Post a Comment