Thursday, 27 September 2018

দিল্লী-আগ্রা তৃতীয়দিন 11/10/17 পঞ্চমপর্ব


সকালে ঘুম ভাঙ্গলো রাজার ডাকে। গাড়ি নাকি আটটায় চলে আসবে অতএব তাড়াতাড়ি ওঠো। দরজা খুলে বাইরে গিয়ে দেখি মা বাবা হাসিমুখে ছাদের সিড়ি দিয়ে নামছে। বলা হয়নি আমাদের হোটেলে রুফটপ রেস্ট্রোরেন্ট ছিল। যেখান থেকে তাজ দেখা যেত। মা বাব সেখান থেকেই ফটো তুলে নামছিল
আজ আমাদের ফতেপুর সিক্রী যাবার কথা। রাজা গতকাল গাড়ী ঠিক করে রেখেছিল। আমরা ব্রেকফাস্ট করে বেড়িয়ে পড়লাম। তবে আমি কিছু খাইনি, আগেরদিন থেকে আমার মাইগ্রেনের পেইন শুরু হয়েছে, খেলে হিতে বিপরিত।
বেশীক্ষণ নয় দেড় ঘন্টা লাগলো। গাড়ী আমাদের একজায়গায় নামালো তার থেকে বেশী যাবার তার অনুমতি নাই। আমরা একটা গাইড ঠিক করে তার ঠিক করা অটোতে চেপে বসলাম। তিন মিনিটে অটো থামলো একটা ছোট টিলার নীচে। যেখান থেকে ঢালু রাস্তা উঠে গেছে টিলার ওপরে কেল্লা পর্য্যন্ত। আমরা হাঁটা শুরু করলাম। গাইডের খুব তাড়া। আমাদের তাড়া দিয়েই চলেছে। কিন্তু আমরা তার কথায় কর্ণপাত না করে গজেন্দ্র গমনে গিয়ে পৌছলাম কেল্লার সামনে। ওরে বাবা সামনে গিয়ে দেখি দোতলা সমান উচ্চতা ওঠার জন্য খাঁড়া, সিঁড়ি নয়, ঢালু রাস্তা। উঠে এলাম। সবাই এখানে জুতো খুলছে কারণ ভিতরে সেলিম চিস্তির সমাধি মন্দির। আমাদের গাইডের পরিচিত একজনের হাওয়ালে জুতো রেখে আমরা গাইডের পিছু নিলাম। আমরা যেখান দিয়ে ঢুকলাম সেটিও একটি বড় গেট তবে সেটি বুলন্দ দরয়াজা নয়। ভিতরে ঢুকে দেখলাম এক সুবিশাল প্রশস্ত জায়গার এক কোনে সেলিম চিস্তির সমাধি মন্দির, সাদা মার্বেলে ঝক ঝক করছে। আর রয়েছে একটি মসজিদ। পুরো এলাকাটা ঘিরে রয়েছে ছোট ছোট ঘরে। গাইড বলল ওগুলো আকবরের তৈরী মেয়েদের জন্য মাদ্রাসা। ওখানে বেশ অনেকগুলি কবর দেখলাম। সেগুলি সবই সেলিম চিস্তির পরিবার পরিজনদের। স্থানীয় পসারীরা নানারকম মার্বেল পাথরের পসরা নিয়ে বসেছিল। সবচেয়ে খারাপ লাগলো 'সেলিম চিস্তির সমাধিতে চাদর চরানো' একটা ব্যবসা এখানে। প্রথমে বলে নেবে চাদর চড়ালে অমুক-তমুক ভালো হবে। তারপর তার দাম হাঁকবে, আটহাজার, পাঁচহাজার, এক হাজার। গাইড আমাদের একটি দরজা দেখালো যেটা সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে। ওটি একটি সুরঙ্গের প্রবেশ পথ। ওটার সাথে সংযোগ আছে আগ্রা ও লাহোর ফোর্টের। ইতিহাস বলে আকবরের প্রথম স্ত্রী রুকাইয়া বেগম আনারকলিকে ওই পথ দিয়েই পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিলেন। গাইড নানারকম স্থানিয় ঘটনার কথা বলতে বলতে পসারিদের পাশ কাটিয়ে কেল্লার বাইরের দিকে নিয়ে এল। দূরে লাইট হাউসের মত দেখতে একটা জিনিস দেখালো। ওটা আকবরের প্রিয় হাতি সমাধি। আমরা আকবরের টাঁকশালও দেখলাম। আমাদের বাঁ দিকের কতগুলো construction দেখিয়ে গাইড বলল ওটা যোধাবাঈ মহল। কেল্লা আর যোধাবাঈ মহলের যে ফারাক, সেটা এখন গাছপালায় ভর্তি হয়ে গেলেও ওটা কেল্লার মধ্যেই ছিল। কিন্তু এখন মনে হয় দুটোই আলাদা। কেল্লার গায়ে ছোটছোট খুপরি করা হয়েছিল সে সময়কার ডাকহরকরা পায়রাদের জন্য। গাইড এবার আমাদের নিয়ে এল বুলন্দ দরয়াজার সামনে। দরজার গায়ে ছোটবড় নানান সাইজের ঘোড়ার নাল লাগানো। জানলাম আকবরের সময় থেকে কারও ঘোড়া অসুস্থ হলে সেলিম চিস্তির সমাধিতে মানত করতো, ঘোড়া সুস্থ হয়ে গেলে তার নাল ঐ দরজায় লাগিয়ে দিত। এই দরজা দিয়ে সম্রাট আকবর ঢুকতেন আর সাধারনের জন্য অন্য দরজা, যেখান দিয়ে আমরা ঢুকলাম। সে নিয়ম আজও চলছে, শুধু সম্রাটই আর নেই । বাস্তব থেকে বেখবর বুলন্দ দরজা যেন এখনও তার সম্রাটের অপেক্ষায় রোজ দরজা খুলে চেয়ে থাকে পথের দিকে। কিন্তু তার সম্রাট তো আজ ইতিহাস!

No comments:

Post a Comment