Thursday, 27 September 2018

দিল্লী-আগ্রা চতুর্থদিন 12/10/17 নবম পর্ব


আকবরের প্রথমা স্ত্রী রুকাইয়া বেগম ছিলেন নিঃসন্তান।পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরের পুত্র খুরম অর্থ্যাৎ শাহ্জাহানকে দত্তক নিয়ে নিজের মত করে মানুষ করেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রীর উল্লেখ অপ্রয়োজনীয়।চতুর্থ স্ত্রী ছিলেন সলিমা সুলতান বেগম। যিনি ছিলেন বৈরাম খানের স্ত্রী।কিন্তু আকবর চিরকাল এঁনাকে নিজের নয় বৈরাম খানের স্ত্রী হিসেবেই সন্মান করে এসেছেন। পঞ্চম স্ত্রী ছিলেন আমের রাজ বিহারিমল বা ভারমলের কন্যা যোধাবাঈ বা হরকা বাঈ। যিনি আকবরের প্রথম পুত্র সন্তান সেলিমের মা ছিলেন। যেহেতু তিনি পুত্র সন্তান উপহার দিয়েছিলেন তাই আকবর তাকে মরিয়ম-উজ-জমানি নামে ভুষিত করেন। এবং এই নামই সর্বত্র উল্লেখ আছে। আবুল ফজল একজায়গায় লিখেছেন যে আকবর ছিলেন তার পূর্বপুরুষের থেকে অনেক বুদ্ধিমান। তিনি বিনা যুদ্ধে কেবলমাত্র বিবাহ করে অর্ধেক রাজপুতনা জয় করে ফেলেছিলেন। পরবর্তিকালে তিনি বিকানির ও জয়সলমীরের রাজকন্যাকেও বিবাহ করেন। আকবরের প্রিয় পুত্র ছিলেন দানিয়েল মির্জা। তার মায়ের নাম জানা যায়নি। আকবরের সাথে তার বড় পুত্র সেলিমের কোনওদিনই সদ্ভাব ছিল না। কিন্তু দানিয়েল আকবরকে দাক্ষিনাত্য জয়ে সর্বত ভাবে সাহায্য করেন। এবং পরবর্তিকালে দাক্ষিনাত্যেল শাষনভার আকবর তার হাতেই দেন। আকবর আরও ন'জন মানুষের ওপর খুব নির্ভর করতেন তাঁরা হলেন লেখক ও ইতিহাসবিদ আবুল ফজল,গায়ক তানসেন, প্রধান সেনাপতি মানসিং,অর্থমন্ত্রী তোডরমল, বিদুষক বীরবল, বৈরাম খান পুত্র বিদ্যান আবদুল রহিম,কবি ফৌজি যিনি আবুল ফজলের দাদা ছিলেন, মোল্লা দো পেয়াজা আর এক বিদুষক ও বীরবলের প্রতিদ্বন্দি এবং পরামর্শদাতা ফকির আজিওদ্দিন- যাঁরা একত্রে 'নবরত্ন' বলে পরিচিত ছিলেন। আকবর 3রা অক্টোবর 1605-এ এক dysentery তে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পরেন ও 27 শে অক্টোবর 1605-এ মারা যান। আকবর শেষ জীবনে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছিলেন। কারন তাঁর কাছের মানুষরা অর্থ্যাৎ তার নবরত্নের রত্নরা একে একে মারা যান এবং সুযোগ বুঝে রাজকুমার সেলিম বিদ্রোহ করে বসেন। জাহাঙ্গীরনামা অনুযায়ি আকবরের বাকি দুই পুত্র মুরাদ মির্জা সুলতান এবং দানিয়েল মির্জা ছিলেন রাজ দাসীর পুত্র তাই তারা সিংহাসনে বসার যোগ্য নয়। মুরাদ সিংহাসন নিয়ে উৎসাহি ছিলেন না। শেষজীবনে তিনি তার বাবার সাথেই কাটিয়ছেন।আকবর দানিয়েলকেই শাসক হিসাবে উপযুক্ত মনে করতেন। তাই দোটানার মধ্যে পরে যুবরাজ সেলিমের 36বছর বয়স হয়ে গেলেও রাজ্যাভিষেক হয়নি। সেলিম তার মায়ের সমর্থন না পেলেও তার দুই সৎমা রুকাইয়া এবং সলিমার সমর্থনে আকবর মারা যাবার 8দিন বাদেই 3রা নভেম্বর সিংহাসনে বসেন।জাহাঙ্গীর এতটাই ক্ষমতালোভী ছিলেন যে নিজের বিদ্রোহি বড় পুত্র খসরুকে অন্ধ করে দিতেও এতটুকু হাত কাপেনি এবং পরে শাহ্জাহান একে হত্যা করেন। জাহাঙ্গীরের মামা আম্বের রাজা ভগবান দাসের মেয়ে মনভাবতী বাঈ-এর সাথে বিবাহ হয়।জাহাঙ্গীর তার নাম দেন শাহ্ বেগম আর তার সন্তান হয় খুসরু মির্জা। যেহেতু মা ছিলেন রাজপুত, হয়তো সেই কারনেই জাহাঙ্গির বেশ কয়েকজন রাজপুত রাজকুমারিকে বিবাহ করেন। তার মধ্যে উল্লখযোগ্য ছিলেন মারওয়া-র বর্তমানে যোধপুর-এর রাজকন্যা উদয় সিং-এর কন্যা 'যোধবাঈ'। যোধাবাঈ নয় কিন্তু! পরবর্তিকালে ইনি পরিচিত হন জগৎ গোসাইনি নামে। ইনিই জনাম দেন পরবর্তী সম্রাট শাহ্ জাহান কে।ইনি জাহাঙ্গীরের প্রিয় রানি ছিলেন যতদিন না নুর জাহান কে জাহিঙ্গীর বিয়ে করেন। 1611তে নুর জাহানেল সাথে বিবাহ হয় আল 1619-এ জগৎ মারা যান। মৃত্যুর পর ইনি বিলকিস মাকানি উপাধি পান। ইনি কিন্তু পাটরানী ছিলেন না। পাটরানি বা সম্রাঙ্গী ছিলেন সালিহা বানু বেগম যিনি জাহাঙ্গীরের প্রথম স্ত্রী ছিলেন। 1605 থেকে 1620-তার মৃত্যু পর্য্যন্ত এই পদটি ইনিই অলংকৃত করেছেন। 1620 তে ইনি মারা যাবার পর নুরজাহান সম্রাঙ্গির পদটি পান।28শে অক্টোবর 1627 সালে 58বছর বয়সে ঠান্ডালেগে কাশ্মীরে জাহাঙ্গীর মারা যায়। জগৎ প্রথমে তিনটী কন্যা সন্তানের জন্ম দেন কিন্তু তিনটিই শিশু অবস্থাতেই মারা যায় তাই যেই মুহূর্তে খুরমের জন্ম হয় 6 দিন বয়সে আকবর রুকাইয়ার কাছে খুরম কে প্রেরণ করেন। রুকাইয়ির কাছেই শাহজাহান মানুষ হন। শাহ্জাহান আর মুমতাজের ঘটনা নতুন করে বলার কিছু নেই। শাহ্জাহান এত আড়ম্বর প্রিয় ছিলেন যে অগাধ অর্থ খরচ করে রাজকোষ প্রায় শূন্য করে ফেলেন।তখন তার পুত্র ঔরঙ্গজেব আগ্রাফোর্টে বন্দী করে ফেলেন কিন্তু শাহ্জাহান আত্মসমর্পন না করায় যমুনার থেকে কেল্লায় জল সরবরাহ পদ্ধতিটি বন্ধ করে দেন। শাহজাহান আত্মসমরপন করতে বাধ্য হন। শেষ পাঁচ বছর এখানেই বন্দী থাকেন তিনি।
পরের পর্বে এঁনাদের সৃষ্টির ঐতিহাসিক কাহিনি জানাবো।

No comments:

Post a Comment