Thursday, 27 September 2018

দিল্লী-আগ্রা তৃতীয়দিন 11/10/17 ষষ্ঠ পর্ব


কেল্লা থেকে বেরিয়ে গাইড বিদায় নিল। সে শুধু আমাদের যোধাবাঈ মহল যাবার রাস্তাটা দেখিয়ে দিল। আমরা টিকিট কেটে প্রবেশ করলাম। রোদের সাথে সাথে আমার মাথাব্যাথাও চরছিল। মাথার একটা বিশেষ জায়গায় চাটি মারলে ব্যাথাটা খানিক প্রশমিত হয়। আমি মাঝেমাঝেই সেটা করছিলাম। হঠাৎ দেখি এক বিদেশিনী অবাক চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছে। বুঝলাম ব্যাপারটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। শেষে হয়তো আগ্রা পাগলাগারদেই চালান হয়ে যাব!
আকবর মানেই তো লাল বেলে পাথর, এখানেও তার উপস্থিতি। পাথরে সুন্দরconstruction আর নকশা দুটো দেখলেই বলে দিতে হয় না যে এ নিশ্চিত ভাবে যোধাবাঈ মহল। কারণ এতে রয়েছে রাজস্থানি শিল্পকলার ছোঁয়া। অবশ্য আকবর নিজেও একপ্রকার রাজপুত বলা যেতে পারে। কারণ আকবরের জন্ম হয়েছিল এক রাজপুতের ঘরেই এবং ছোট থেকে বালক হওয়া সেখানেই। তাই রাজস্থানি রহন-সহন তাঁর মজ্জা গত ছিল,রক্ত তার মোগল হলেও। জানলা, কুলুঙ্গি, ঠাকুরের আসন সব কিছুতেই রাজস্থানি শিল্পকলার ছাপ সুস্পষ্ট। একতলা, দোতলায় পুরোমহল সুবিন্যস্ত। মহল টা ছিল ঠিক আগেকার দিনের জমিদার বাড়ীর মত। মাঝখানে বিশাল প্রশস্ত এলাকা আর চারপাশে ঘর। মহল থেকে বেরিয়ে শাহী রান্নাঘর। যদিও সেটি তালাবন্ধ থাকার কারণে আমরা ভিতরে ঢুকে দেখতে পেলাম না। এরপর এক এক করে পঞ্চমহল, অনুপ তালাও, দেওয়ানি আম দেওয়ানি খাস দেখলাম। সব থেকে interesting লেগেছিল কোষাগার। দেওয়াল লাগোয়া ছোট ছোট চৌবাচ্চার মত। উপরটা টেবিলের মত তার মাঝখানে 12ইঞ্চি/12ইঞ্চি গর্ত, যেটা আবার পাথরের স্লাইডিং ঢাকা দেওয়া। মেঝেতেও একটা বড় আয়তকার পাথর আলগা। তাতে একটা গোলাকার ছোট গর্ত। অনুমান করা যায় ঐ গর্তর মধ্যে কিছু ঢুকিয়ে চাড় দিয়ে খোলা হত।
দেওয়ানি খাসের মাঝখানে রয়েছে লোটাস পিলার। সুন্দর পাথরের নকসা তাতে। পঞ্চমহলে বসে রানীরা হাওয়া খেতেন। অনুপ তালাবের জল এখন শ্যাওলা ধরা হলেও একসময় নিশ্চই স্বচ্ছ ছিল। এর মাঝখানে এক বেশ বড় বসার জায়গা। জানা যায় ওখানে তানসেন গাইতেন। অনুপ তালাবের জল ছাড়া এখানে আর কোন জলের অস্তিত্ব নেই। এমনকি কোনও ফোয়ারা জাতিয় কিছু দেখলাম না। বোঝাযায় এখানে জলের উৎস হিসাবে বৃষ্টির উপরই নির্ভর করতে হত।
আকবর চিরকালই ফতেহপুর সিক্রীকে রাজধানি হিসেবে পছন্দ করতেন। প্রথমদিকে তাই করাও হয়েছিল। কিনতু নানান প্রদেশের বিদ্রোহ সামাল দেওয়া ফতেপুর সিক্রী থেকে অসুবিধা ছিল। প্রধান বাধা ছিল যাতায়াত। তাই সেইসময় রাজধানি আগ্রাতে স্থানান্তরিত করা হয়। শেষ জীবনে আবার তিনি ফতেপুর সিক্রী ফিরে যান এবং সেখানেই তিনি মারা যান।
আমাদের গাড়ির ড্রাইভার তাড়া দিচ্ছিল। তাই আমরা বেরিয়ে এলাম। পিছনে পড়ে রইল ইতিহাসের এক বিশাল অধ্যায়। অটো করে গাড়ীর কাছে পৌছলাম। গাড়ীতে চেপে পিছন ফিরে একবার কেল্লার দিকে ফিরে তাকালাম। সম্রাট আকবরের স্নেহধন্যা এই কেল্লা একা পরে আছে বছরের পর বছর। না জানি আরও কত বছর পরে থাকবে এই সুবিশাল আকাশের নীচে নিসঙ্গ একাকী।

No comments:

Post a Comment