Thursday, 27 September 2018

দিল্লী-আগ্রা চতুর্থদিন 12/10/17 অষ্টম পর্ব


আমাদের দিল্লী যাবার বাস আগেই বুক করাছিল। আগ্রার হোটেলের টাকা মিটিয়ে আমরা বেরিয়ে এলাম। যথাসময় বাস ছাড়লো।
বাস ছুটে চলেছে দিল্লীর দিকে আর আমি ডুবে গেলাম ইতিহাসে। ইতিহাস চিরকাল আমার প্রিয়। তাই কোথাও যাবার সময় সেখানার বিষয়ে আদ্যপান্ত জেনে তবেই আমি পা রাখি। আজকাল কিছু জানতে হলে, কোনও অসুবিধা নেই নেট দেখো। তবে নেট দুনিয়ায় প্রচুর ভাওতাবাজি আছে। ভুলভাল তত্ত্বে পূর্ন করে একটা ডকুমেনট্রি বা একটা পেজ খুলে ফেললেই হল। জনগন খাবে ভাল! Wikipedia কে নির্ভরযোগ্য বলা যেতে পারে। তবে আমি মোগল ইতিহাস জানতে নির্ভর করেছি, বাবরনামা-যেটি বাবর নিজেই লিখেছিলেন, হুমায়ুননামা-যেটি বাবর কন্যা এবং হুমায়ুনের বোন গুলবদন বেগম লিখেছিলেন, আকবর নামা এবং আইন-ই-আকবরি- দুটিই লিখেছিলেন আকবরের বন্ধু তথা 'নবরত্ন'এর একজন, আর তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরি-যেটি লিখেছিলেন জাহাঙ্গীর নিজেই, এইবইগুলিল ওপরেই নির্ভর করেছি। আসল গুলির হিন্দি অনুবাদগুলোই আমাকে জানতে সাহায্য করেছে।
মনে প্রশ্ন জেগেছিল কিভাবে এই আগ্রাফোর্ট, তাজমহল, দিল্লী লালকেল্লা পেয়েছি। জানতে হলে চলে যেতে হয় সেই 1495 সালে যখন 12 বছরের বাবর বসেছিলেন ফেরজানার মসনদে তার বাবার মৃত্যুর পর। আত্মীয়স্বজনের বিরোধিতায় জেরবার বাবর এর দুবছর বাদে সমরখন্দ জয় করলেন। কিন্তু হাত থেকে ফেরজানা বেরিয়ে যায়।1501-এ ফেরজানা আবার জয় করলেন তো সমরখন্দ হাত থেকে বেরিয়ে গেল।অবশেষে 1504 -এ তিনি দুটিই জয় করেন।এরপর কাবুলও তিনি জয় করেন। কিন্ত এইভাবে বাবর সুখি ছিলেন না। তার স্বপ্ন ছিল একছত্র অধিপতি হবার। তখন তার নজর পড়ে উত্তর ভারতের দিকে। সেখানে তখন ইব্রাহিম লোদি ক্ষমতায়।1526-এ প্রথম পানিপথের যুদ্ধে লোদিকে পরাস্ত করে দিল্লীর মসনদে বসে মোগল সাম্রাজ্যের গোড়াপত্তন করেন। যেহেতু আমি ইতিহাস বই লিখতে বসিনি তাই বিশেষ detail-এ যাচ্ছিনা। বাবরের তৃতীয় স্ত্রী মহাম বেগমের সন্তান ছিলেন হুমায়ুন। প্রথম স্ত্রী আয়সা সুলতান বেগমের ছিল একটি কন্যা আর দ্বিতীয় স্ত্রী জৈনব সুলতান বেগম নিঃসন্তান অবস্থায় বিয়ের দুবছরের মধ্যেই মারা যান।বাবর খুব কম বয়সে মাত্র 47 বছর বয়সে 1530সালে মারা যান। কেন এবং কিভাবে তা সকলেরই জানা।
পিতার মৃত্যুর পর 23 বছর বয়সে অনভিঞ্জ হুমায়ুন ক্ষমতায় আসেন। কিন্তু অনভিঞ্জতার কারনে একে একে সব হাত ছারা হয়ে যায় সৎ ভাই আর শের শাহ্ সুরির কাছে। 15 বছর পর এক এক করে সব আবার তিনি জয় করেন।পিতার মত তিনিও 47 বছর বয়সে 1556 সালে মারা যান। দু হাতে বই নিয়ে তাঁর গ্রন্থাগার থেকে নামছিলেন। সেইসময়ে আজানের ডাক আসে। তাঁর অভ্যাস ছিল যে অবস্থাতেই তিনি থাকুন না কেন হাটু গেড়ে বসে পরতেন। সেই প্রচেস্টা করতে গিয়ে পোশাকে পা জড়িয়ে সিঁড়ি থেকে পড়ে যান এবং তার ঠিক তিন দিন বাদে তাঁর মৃত্যু হয়। হুমায়ুনের প্রথমা স্ত্রী বেগাবেগম ছিলেন হুমায়ুনের মামাতো বোন। তার সন্তান আল-আমন-মির্জা ছিল হুমায়ুনের প্রথম সন্তান কিন্তু সে শিশুকালেই মারা যায়। এরপর দ্বিতীয় স্ত্রী হামিদা বানু বেগমের সন্তান হয় আকবর।
1542 সালে যখন হুমায়ুন তাঁর পরিবার সহ সিন্ধের ওমরকোট দূর্গে হিন্দু রাজা রানা প্রসাদের আশ্রিত ছিলেন, সেই সময় আকবরের জন্ম হয়। হুমায়ুন যখন সাম্রাজ্য হারিয়ে আশ্রিত হয়ে রয়েছেন সেই সময় তার সৎ ভাই কামরান মির্জা আর আসকারি মির্জা আকবরকে কাবুল নিয়ে যান। সেখানে সমস্ত রকম তালিম পান আকবর কিন্তু লেখাপড়া তিনি শেখার সুযোগ পাননি। 1551 সালে হুমায়ুনের প্রিয় ভ্রাতা হিন্দল মির্জা এক যুদ্ধে মারা যান। এতে হুমায়ুন খুব ভেঙ্গে পরেন এবং হিন্দল মির্জার ন'বছরের কন্যা রুকাইয়া বেগমের সাথে ন'বছরের আকবরের বিবাহ দেন।আকবরের কথা বলতে গেলেই খুব স্বাভাবিক ভাবে বৈরাম খানের কথা চলে আসে। বৈরাম খাঁ ছিলেন হুমায়ুনের খুবই বিশ্বস্ত এবং হুমায়ুনের অবর্তমানে আকবরের অভিভাবক হয়ে মোগলদের নুয়ে যাওয়া ধ্বজা তুলে ধরেন।বৈরাম খাঁ 16বছর বয়সে বাবরের সেনাবাহীনিতে যোগ দেন আর নিজের দক্ষতায় ধীরে ধীরে হুমায়ুনের প্রধান সেনাপতিতে উন্নিত হন। হুমায়ুনের অকস্মাৎ মৃত্যুতে দিল্লীর সিংহাসন টলমল হয়ে পরে। ন'মাস বাদে 7ই অক্টোবর 1556 হিন্দুরাজা হিমু দিল্লী আক্রমণ করে বসে।এর ঠিক এক মাস বাদে 5ই নভেম্বর 1556 তে পানিপথের দ্বিতীয় যুদ্ধে বৈরাম খানের সেনা হিমুর একটি চোখ কানা করে পরাস্ত এবং পরে হত্যা করে।নাবালক আকবর কে সিংহাসনে বসিয়ে অভিভাবক হয়ে কাজ করতে থাকেন বৈরাম খান। কিন্তু আকবরের সাথে মতের মিল না হওয়ায় বৈরাম খানকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে বলা হয়। বৈরাম খান যখন স্ত্রী পুত্র নিয়ে মক্কা শরিফ রওনা হন তখন হিমুর সহচর হাজি খান মেওয়াটি হিমুর হত্যার প্রতিশোধ নিতে বৈরাম খান কে হত্যা করেন এবং তাঁর স্ত্রী সলিমা বেগম ও পুত্র রহিমকে আগ্রা পাঠিয়ে দেয়।পরবর্তীকালে সলিমা বেগমকে আকবর নিকাহ্ করেন এবং রহিম রাজসভায় নবরত্নদের মধ্যে একজন হয়।
বাকি অংশ জানাচ্ছি পরের পর্বে.....

No comments:

Post a Comment