আজ দীপার ফিরতে বেশ দেরিই হয়েছে। চটি খুলতে খুলতে আড়চোখে বাবাকে একবার দেখে নিল দীপা। রেগে আছে কিনা বোঝা গেলনা,সংবাদপত্রের দিকে চোখ। রান্নাঘর থেকে মা বলল “দীপা হাত মুখ ধুয়ে টবিলে বোস খাবার বাড়ছি”। বাবা গম্ভীর গলায় বলল,“ না কাপড় ছেড়ে আসুক। তোমরা মা মেয়েতে তো আমার কোনও কথাই শোনোনা অন্তত এই নিয়মটাতো মানো”। বাবার রাগ করাটা সঙ্গত। গত পরশুও মোড়ের মাথায় একটি মেয়ের ওরনা ধরে টেনেছে একদল ছেলে। পুলিশকে কিছু জানায়নি বাড়ীর লোক। এসব ক্ষেত্রে যা হয় পাড়া প্রতিবেশী “মেয়েটাই খারাপ” এই জাতীয় মন্তব্য করে মেয়েটার বাড়ীর সকলকে একঘরে করে দিয়েছে।
আজ নিলাদ্রীর সাথে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল দীপা। অফিস থেকে তাড়াতাড়িই বেড়িয়েছিল কিন্ত ডাক্তারের চেম্বারে ভীড় ছিল। আজ ডাক্তারের কথায় নিলাদ্রীর মন ভেঙ্গে গেছে। কথা শুনে মনে হল কোনও আশা নেই। নিলাদ্রী কোনও দিনই বাবা হতে পারবেনা। নিলাদ্রী একদিকে কষ্ট পাচ্ছে দীপাকে বিয়ে করলে দীপা মা হওয়া থেকে বঞ্চিত হবে অন্যদিকে দীপাকে সে ছেড়ে থাকার কথা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনা। দীপার মনটাও খারাপ হয়ে আছে নিলাদ্রী অসহায় মুখটাই বার বার মনে পরছিল। বাবা-মাকে এই বিয়েতে রাজী করানো খুব মুশকিল হবে। কি যে করবে দীপা বুঝতে পারছিলনা। খাবার টেবিলে কথা তুলতেই হল আর দীপা যেই ভয়টা করেছিল তাই হল। বাবা খাওয়া শেষ নাকরে উঠে গেল আর মা কাঁদতে শুরু করল।
পনেরো দিন হয়ে গেল মা-বাবা কথা বলছেনা। বাড়ীর থমথমে আবহাওয়ার জন্য বাড়ী ঢুকতেও ইচ্ছা করেনা। এইসব ভাবতে ভাবতেই বড় রাস্তা পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলো দীপা। ভিতর দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফেরা যাবে। আজ আবার দেরী হয়েছে, মা নিশ্চই চিন্তা করছে। হঠাৎ সামনে ভুতের মত উদয় হল শংকর। দীপা চমকে গিয়েছিল। বিরক্ত হয়ে বলল “তুই এখানে!?”। শংকরের যেন উত্তর তৈরীই ছিল,বলল “সেম কথাতো আমিও বলতে পারি। পটলার হাত দিয়ে চিঠি পাঠালাম উত্তর দিলি না কেন?” দিপা আরও বিরক্ত হয়ে বলল “বয়সটা ভুলে যাস নাকি! এখন কি চিঠিচাপাটির বয়স আমাদের। রাস্তা ছাড় দেরি হয়ে যাচ্ছে।” শংকর দুপা এগিয়ে এসে তাচ্ছিল্যের সুরে বলল “ওঃ দেরি দেখাচ্ছে! রাতবিরেতে যখন ওই ছেলেটার সাথে বেলাল্লাপনা করিস তখন দেরি হয়না! কান খুলে শুনে রাখ, ওই ছেলেটার সাথে মেলামেশা বন্ধ কর বুঝলি। তুই শুধু আমার বুঝলি। সোজা আঙ্গুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল ট্যাঁরা করতে আমি জানি।” দীপা রাগে অন্ধ হয়ে শংকর কে একধাক্কা দিয়ে বলল,“কি করবি তুই অ্যাঁ,কি করবি” “কি করবো?”বলে এক হ্যাঁচকায় দীপা কাধে তুলে নিয়ে অলিগলি পেরিয়ে একটা পোড়ো বাড়ীতে এনে ফেলল। দীপা আত্মরক্ষার জন্য হাত পা ছুঁড়তে থাকে। শংকর দীপার ওরনা দিয়ে হাত আর পা বাঁধে। “আমি কি করতে পারি। এইবার দ্যাখ। আমার সন্তানের মা হলে তুই আর তোর বাড়ীরলোক ‘না’ কিকরে করবি রে!” শংকরের ব্যর্থ পৌরুষ বলে উঠল, “খবরদার কাউকে যদি আজকের ঘটনা বলেছিস তোদের হোল ফ্যামিলির মুন্ডু কেটে পুকুরে ভাসিয়ে দেব।”
দুদিন ধরে দীপা নীলের ফোন ধরেনি দেখাও করেনি। নীল পাগলের মত ফোন আর ম্যাসেজ করে চলেছে। কোনমুখে সে নীলেরসামনে গিয়ে দাঁড়াবে। কি বলবে সে নীলকে! মা বাবাকেও কিছু বলতে পারেনি মুন্ডু কাটার ভয়ে। লাঞ্চটাইমে নীচের মেডিকেল শপ্ টায় এক ৭২ঘন্টার মধ্যের নেবার মেডিসিন দিতে বলল। কখন যে পিছনে নীল এসে দাঁড়িয়েছে দীপা বুঝতেও পারেনি। “কি ব্যাপার কি হয়েছে তোমার?” নীলের গলা শুনে ফিরে নীলকে সামনে দেখে ভেঙ্গে পরলো দীপা। সবকিছু শুনে নিল বলে উঠলো “তুমি কি পাগল হয়ে গেছ! আমাকে এত দূর্বল ভাবো তুমি।” দীপাকে হাল্কা করারজন্য চাপা গলায় নীল বলল“এইভাবে বুঝি বউ বুক করা যায়? তাহলে তো শংকরের বহু আগে আমি তোমায় বুক করেছি” দীপার হাত থেকে মেডিসিনটা নিয়ে নীল ছুঁড়ে ফেলে দিল। দীপা হাঁহাঁ করে উঠলো “আরে ওটা ফেল না”। নীল দীপাকে শান্ত করে বসাল “সেদিনের ঘটনা ভগবানের অভিশাপ নয় গো আশির্বাদ। তোমার শরীরে এখন যে ফরমেশন নেবে সে আমার সন্তান। তোমার শরীরে যে বড় হবে,যাকে আমি মনের মত করে মানুষ করবো সেতো আমার সন্তান হবে। শুধু রক্তের পরিচয়ই কি বাবার একমাত্র পরিচয়,পালক পিতা কি পিতা হতে পারেনা!” দীপার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখল দীপা। নীল দীপা কাঁধে হাত দিয়ে বলল “চলো আজ তোমার মা বাবার কাছে বিয়ের কথাটা পেড়েই ফেলি”
No comments:
Post a Comment