শিউলি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল অন্যমনস্কভাবে। পিউ পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো,“মা আমরা কখন ঠাকুর দেখতে যাব,বাবা কখন আসবে!একটা হোয়াটস অ্যাপ করো না,দেখোনা কোথায় আছে”।
সে কি আর করেনি শিউলি!কিন্তু ম্যাসেজ ডেলিভারই হয়নি। তার মানে ফোন অফ করা। আজ ষস্টি। আজই সবাই ঠাকুর দেখতে বেরচ্ছে। পিউকে রুদ্র বলে গেছে অফিস থেকে এসেই বেরোবে। কিন্তু এখনও কোনও খবর নেই। অস্থির পায়ে এসে ঘরে বসলো শিউলি। পিউকে একটু জল দিতে বলতেই ডোরবেল বেজে উঠল। পিউ দরজা খুলতেই ধীর পায় মাথা নীচু করে ঢুকলো রুদ্র। ধপাস্ করে সোফায় বসে বলল ““আর চাকরি নেই””
ঘরের মধ্যে যেন পারমাণবিক বোমা পড়ল। শিউলি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাতেই রুদ্র বলল,“ওরা আমার কোনও কথাই শুনলো না,শুধু বলল আর আসতে হবে না। কি কারণ কিছুই বলল না”হতাশ গলায় বলল রুদ্র। পিউ হঠাৎ এই খবর আশা করেনি। বিস্ফরিত চোখে বাবার হতাশ মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। খানিকটা হতাশা,খানিকটা ভয় আর খানিকটা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক সেই দৃষ্টিতে ছিল। আশা শিউলীও করেনি কিন্তু এই মুহূর্তে শুধু মনে হচ্ছিল এই আবহাত্তয়া ঠিক করা একান্ত দরকার। যা হবার তো হয়ে গেছে। অবশ্য অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত সেও। কিন্তু ভেবে কিহবে,যা হবে তা ফেস করবো—করতেই হবে!সারাটা বছর এই কটা দিনের অপেক্ষায় বসে থাকা, সারাটা বছর একটু একটু করে তৈরী হওয়া সমস্ত কিছু পন্ড হতে দেওয়া যায় না। রুদ্র বহুবার ‘বেস্ট সেলার’ অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। চাকরী ছাড়া ও থাকবেনা শিউলি জানে। রুদ্রকে সব কোম্পানি ডেকে নিয়ে গেছে। তবে চিন্তা কি!
শিউলি উঠে গিয়ে চা বসালো। রুদ্রর সামনে এসে দাঁড়ালে রুদ্র অসহায়ের মত তাকালো শিউলির দিকে।
“আরে তুমি এত হতাশ হচ্ছ কেন!ভুভারতে কি এছাড়া আর কোনও সেলস্ এর জব নেই।” রুদ্র অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল শিউলির মুখের দিকে। “আরে বাবা মনে করনা এটা তোমার পূজা বিরতি!” রুদ্রর মুখ ধীরে ধীরে নর্ম্যাল হতে শুরু করেছে। “তোমাকে আমরা কতটুকু পাই বল!এই ছুতোয় তোমাকে আমরা একটু কাছে পাব। বেড়াব আনন্দ করবো”রুদ্রর মুখ ঝলমল করে উঠলো। ওদিকে চায়ের জল ফুটতে শুরু করেছে। শিউলি উঠে গেল।
চা নিয়ে যখন আবার ড্রইংরুমে ঢুকল আবহাওয়া বদলে গেছে। রুদ্রকে পিউ মোবাইল অন করে পূজার ম্যাপ দেখাচ্ছিল অ্যাপ খুলে।
“কিন্তু শিউলি সংসার চলবে কিকরে!” হাতে চা নিয়ে রুদ্র বলল।
“কেন?আমরা কি দিন আনি দিন খাই নাকি? সেভিংস অ্যাকাউন্টে টাকা আছে। দরকার পড়লে ফিকস্ট ভেঙ্গে অল্প নিয়ে আবার ফিকস্ট করে দেবো। অত ভেবনা। ভেবে কিছু হাল বেরোবেনা। জব তুমি ঠিক পেয়ে যাবে। যাও ফ্রেস হয়ে নাও,জামা প্যান্ট বার করে দিচ্ছি”।
পিউয়ের ঘর থেকে তখন পিউয়ের গলা পাওয়া যাচ্ছে বন্ধুদের সাথে পূজোর প্যানিং নিয়ে কথা চলছে।
No comments:
Post a Comment