Saturday, 22 October 2016

রাধা

 

““বাঁচাও”” চিৎকার টা শুনে আমি থমকে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আর ঠিক তখনই সামনে এসে হুমরি খেয়ে পরলো  মোরের মাথায় ধুপকাঠি বিক্রী করা মেয়টি। আমি প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। পরক্ষণেই মনে হলো এখান থেকে মেয়েটিকে সড়ানো দরকার। একটা অটো ডেকে উঠে পরলাম দুজনে। অটোতে যেতে যা শুনলাম তাতে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যায় আরকি! মেয়েটির নাম রাধা। এসেছে উত্তরপ্রদেশ থেকে। বাড়ীতে তিন ভাই বোন,মা আর পঙ্গু বাবা। একমাস আগে ওদের গ্রামের একটি ছেলে ,যে এখানে কাজ করে ,তার সাথে কোলকাতা আসে। কিন্তু রাধা জানতো না যে ছেলেটি এখানকার কাজ আসলে চুরি করা।হাওড়াতে নামার সাথে সাথে ছেলেটিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তিন বছরেরে জন্য সে এখন শ্রীঘরে। ছেলেটির এই অবস্থা হওয়াতে রাধা মুশকিলে  পরে গেল। ওর কাছে ফিরে যাবারও পয়সা ছিলনা। দুদিন শুধু রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছে। তারপর একজন ধুপকাঠির হোলসেলার ওকে এইকাজ দেয়। প্রতি প্যাকেটে ৫০পয়সা কমিশন। ভালোই চলছিল। কিন্তু গত চারদিন ধরে তিনটি ছেলে ওকে উতক্ত করছে। আজ তো ওকে জোর করে ট্যাক্সিতে তুলছিল, ও কোনও রকমে পালিয়ে বেঁচেছে। 

কথা শেষকরে হুমরি খেয়ে আমার পায়ের ওপর পড়লো মেয়েটা, “দিদি গো আমায় বাঁচাও। আমাকে যেকোনও একটা কাজ দাও। আমি তোমার ঘরের সব কাজ করে দেব।” আমি ওকে আশ্বস্ত করলাম। ওরয়ে গেল আমার বাড়ীতে। আমার ঠিকা কাজের লোক ছিল। বহুদিন ধরে একটা রান্নার লোক খুঁজছিলাম। রান্নার হাতটা বেশ। আমাদের কিছু রান্নাও ওকে শিখিয়ে নিলাম। ও আসাতে আমার বুটিকের কাজেও আমি বেশ মন দিতে পারছিলাম। আমার শ্বাশুরীও বেশ খুশী। রাধাও খুশী। কদিনেই আমার বাড়ীর লোকের চোখের মনি হয়ে উঠল রাধা। 

একদিন.........

রাতে বাড়ী ফিরেছি। রাধা রাতের খাবার তৈরীতে ব্যস্ত। আমি জল খেতে রান্নাঘরে ঢুকে দেখি আটা মাখার থালাটার ওপর একটা সুন্দর মুর্তি বসানো। ভালো করে দেখে বুঝলাম আটাটাকে মেখে একটা পুতুল তৈরী করে রেখেছে। ব্যাপারটা আমার মজার আর ইন্টারেস্টিং লাগল। পরেরদিন আবার ওর রুটি করার আগে রান্নাঘরে উঁকি দিয়ে দেখি আর একটা অন্য পুতুল বানিয়ে রেখেছে। এই বেশকিছুদিন লক্ষ্য করলাম প্রত্যেকদিনই কিছুনাকিছু ও বানিয়ে রাখে। ওকে জিগ্গেস করে জানলাম ওর বাবা মাটির পুতুল বানাতেন। সেখান থেকেই ও শিখেছিল। আমি জিগ্গেস করলাম,“তোকে মাটি এনেদিলে তুই পুতুল তৈরী করতে পারবি?”। রাধা এতই অবাক হয়ে গেল যে ওর মুখটা হা হয়ে গেল। কি্তু ওর পরের প্রশ্নে আমার হা হবার পালা। ওবলল,“আমায় তাড়িয়ে দেবে নাতো!”

এরপর একটা বছর হুড়হুড় করে কেটে গেল। এগ্জিবিশন আর এগ্জিবিশন। রাধার মুর্তি পুতুল ফুলদানি বিদেশে যাচ্ছে। নিঃসহায় মহিলাদের ট্রেনিং দেয় ও। অনেক মানুষকে সাহায্য করে। আজ ওর অফিসে ওর অপেক্ষায় বসে থাকতে থাকতে পুরোনো কথাগুলো এই ভাবেই মনে পরে গেল।

No comments:

Post a Comment