Monday, 29 October 2018

প্রেম ~১০ম পর্ব

তমাল বিদেশে গেছে আজ নয় বছর হয়ে গেছে। বিদেশে যাবার পর ও আর কারও সাথে যোগাযোগ রাখেনি মাটিও চেষ্টা করেনি। সে এখন নামকরা সাইকলজিস্ট। একটি নামী বেসরকারি হসপিটালে কর্মরতা। চোখে উঠেছে হাল্কা পাওয়ারের চশমা। শোভা বিয়ে করে ঘোর সংসারী কিন্তু প্রতি রবিবার ফোন করে মাটির খবর নিতে তার কখনো ভুল হয়না। প্রবাল কলেজের একটি মেয়েকেই বিয়ে করেছিল। কিন্তু ওর মায়ের মানষিক
অত্যাচারে মেয়েটি এখন আধা মানষিক রোগী। চিকিৎসা চলছে মাটির কাছেই।

আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরবে ঠিক করেছে মাটি। কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেই, তাছাড়া শরীরটাও ভালো লাগছে না। ঘড়িটা দেখে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে দরজা ঠেলে ঢুকলো একজন সুবেশ তরুন। চোখের রিমলেস চশমাটি ঠিক করতে করতে বললেন, ''সরি, অ্যাটেনডেন্ট আটকেছিলেন কিন্তু আমার দেখা করাটা জরুরী ছিল।" কথা বলার কায়দা দেখে বলে দিতে হয়না তরুনটি 'কে'। অ্যাটেনডেন্ট কাচুমাচু মুখে দরজা খুলে উঁকি মারলো, মাটি ইসারায় ওকে যেতে বলল। এবার তরুনটির দিকে তাকিয়ে বল্ল, "ইয়েস, হোয়াট ক্যান আই ডু ফর ইউ? অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া আমি পেসেন্ট দেখিনা, আপনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে আসুন"
"মাটি প্লিজ" চাপা গলায় ধমকে উঠলো তরুনটি।
"এখানে আমার নাম ধরে কেউ সম্বধন করে না"মাটি গম্ভির গলায় বল্ল।
" সবার আর আমার মধ্যে পার্থক্য আছে।আমি তোমাকে যেকোন জায়গায় যেকোন সময়ে  এই সম্বোধন করতে পারি। কেউ আমায় বাধা দিতে পারবেনা" তরুনটি বলে।
"এতদিন বাদে নিজের অধিকার ফলাতে এসেছো, কে হে তুমি।" মাটির মন্তব্যের উত্তরে তরুনটি বলে," আমি সেই তমাল, যে তোমাকে সময়ের হাতে গচ্ছিত রেখে গিয়েছিলাম"
"বিদেশে কি বাংলা নিয়ে পরছিলে নাকি!" মাটি টেবিল গোছাতে গোছাতে বল্ল।
"নাহ তবে বিদেশে তোমাকে ছাড়া থাকতে থাকতে...."
মাটি মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বল্ল, "কি কাজে এসেছ বলো। আমার তাড়া আছে, বেড়বো"

বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে তমাল বল্ল," তুমি আমায় কথা দিয়েছিলে আমার মানষিকতা বদলালেও তোমার বদলাবেনা!"
"বদলায় নি তো!"
"আমিও বদলাই নি। এই কয় বছর আমি শুধু তোমার কথাই ভেবেছি, কবে ফিরবো তার দিন গুনেছি।" মাটি কিছু বলতে যাচ্ছিল। কিন্তু তমাল টেবিলের ওপর তার বাড়িয়ে রাখা হাতে হালকা চাপ দিয়ে বলল, "অনেক তো হলো একা চলা এবার তোমার এই হাতটা ধরে তোমার সাথে পা মিলিয়ে চলতে দাও" তমাল চুপ করলো মাটিও চুপ। কিছুক্ষন থেমে তমাল আবার বলল, "চলবে তুমি সারাটা জীবন একসাথে, একছাদের তলায়, একইবন্ধনে?" মাটি মুখে আর কিছু বলতে পারলোনা, শুধু বাষ্পসিক্ত গলায় বলল,"পারব"।

সমাপ্ত







Thursday, 25 October 2018

প্রেম~৯ম

মাটি কলেজ আসে সবার আগে। তখন সবে মাত্র অনিল কাকা কলাপসিবল খুলে ক্লাসরুমগুলোর তালা খোলে। আজ কোলাপসিবলের সামনে তমাল কে দেখে মাটি একটু অবাকই হলো। আজকের দিনটা একটু অন্যরকম কারন আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই চলেছে।মাটি আজ এসেছে লাইব্রেরিতে একটা কাজ আছে তাই নইলে ও-ও আজ আসতো না। আজকের দিনটা বাড়ীতে বসে খিচুড়ি খাবার দিন।
মাটি ছাতা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে প্লাস্টিক বার করে তার মধ্যে রাখলো। ততক্ষন পর্যন্ত তমাল মাটি কে জরিপ করছিলো। মাটি ক্লাসের দিকে পা বাড়াতেই তমাল রাস্তা আগলে দাঁড়ালো, "তোমার সাথে কথা আছে"
খুব নির্লিপ্ত ভাবে মাটি বলল, "আমার আপনার সাথে কোনও কথা নেই"
তমাল কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মাটি ক্লাসের দিকে চলে যায়। হতবুদ্ধি তমাল দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিনে বহুবার তমাল চেষ্টা করে মাটির সাথে কথা বলতে কিন্তু প্রতিবারই মাটি তমালের চেষ্টায় ছাই ফেলে চলে যায়।
    আজ শোভা আসেনি। প্রথমে ভেবেছিল পরের ক্লাসগুলো না করে চলে যাবে মাটি। সারাদিন অবিশ্রান্ত ধারায় হয়েই চলেছে বৃষ্টি। হাতে গোনা স্টুডেন্ট এসেছে। টিচারাও এসেছে কম। কিন্তু পরে ভাবলো বাড়ি গিয়েই বা কি হবে, আধা দিন তো পেরিয়েই গেছে। ইম্পরট্যান্ট কিছু লেখার ছিলো তাই লাইব্রেরিতে গিয়েই বসলো।বেশ কিছুক্ষন পর মনে হলো কেউ পাশে বসলো। খানিক পর একটা স্লিপ এল, 'প্লিজ আমার কথাটা শুনে, তারপর ডিসিশন নাও'। মাটি উঠে পড়লো। বইটা জমা দিয়ে বেড়িয়ে এল। অনুভব করলো পিছনে তমালও আসছে। মাটি ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো। চারটে বেজে গেছে তাই ক্যান্টিনে ফুড কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। চেয়ার গুলো উলটে টেবিলের ওপর তোলা ছিলো, তারই একটা নামিয়ে মাটি বসলো। তমাল সামনে এসে বসতেই মাটি বলল,"কেন এই ভাবে আমাকে বিরক্ত করছেন আপনি?"
"আপনি!!আপনি বলছো তুমি আমায়!" আহত তমাল বলে ওঠে।
"কেন, এই সম্বোধন তো নতুন নয় আপনার কাছে। বরং তুমি টাই নতুন ছিলো। 'তুমি' তো কাছের মানুষদের বলে তাই না?"
"তুমি কি আমায় কাছের মানুষ মনে করোনা?" তমাল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
"আমার মনে করাতে কি আসে যায়। আপনি যে মনে করেন না সেটা তো প্রমানিত।" মাটি দৃঢ় জবাব দেয়।"গত কদিনের ঘটনা কি সেই প্রমান দেয় না?"
"তোমার কি মনে হয় তুমি আমার কাছের নও"
"নই'ই তো"
"আমি তোমাকে ভালোবাসি, সেটাও কি তুমি বোঝনা" নিরুপায় দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া আহত এক মানুষের মতো বলে ওঠে তমাল।
"এখন আর এসব কথার কোনো মুল্যই নেই" মাটি উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার  টেবিলের নিচে ঠেলে দিতেই তমালের মুখ দিয়ে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেড়লো। মাটি দরজার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল পিছন ঘুরে তমালএর অবস্থা দেখতে গিয়ে দেখে তমাল হাঁটু চেপে ধরে বসে আসে, চোখ দিয়ে জল পরছে। মাটি যখন চেয়ারটা ঠেলে দিয়েছিলো সেটা গিয়ে লেগেছিলো তমালের চোট লাগা পায়ে, যেটা এখনো ঠিক মতো সাড়েনি। মাটি ছুটে এসে তমালের পায়ের কাছে বসে পড়লো
"কোথায় লেগেছে তোমার" মাটি ব্যস্ত হয়ে বলে "এই জন্য আমি বলেছিলাম তোমাকে বাড়িতেই থাকতে। আমার কথা কে শোনে"
"তাহলে মানছো তো আমি তোমার কাছের মানুষ" তমালের কথায় মাটি থমকে গেল, "উঠে বসো" তমাল হুকুমের স্বরে বলল। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ, শুধু বাইরে বৃষ্টির অবিশ্রান্ত আওয়াজ।

"তোমায় ভালোবাসি বলেই অভিমান করেছিলাম। আর তাই......" নিরবতা ভাঙলো তমাল, "তুমি ভুল বুঝোনা আমায়। আমার মনে হয়েছিল তুমি তোমার স্বার্থের জন্যই আমার সাথে ছটাদিন নার্সিংহোম ছিলে"
"স্বার্থ তো আমার ছিলোই। তোমার ওই রকম অবস্থা দেখে আমার যে কি হচ্ছিলো তুমি বুঝবেনা। সহেলী আমায় বলেছিলো আমি তোমার কাছাকাছি গেলে ও আমার ক্ষতি করবে। সে ক্ষতি যে এমন সেতো আমি বুঝিনি।" এটুকু বলে মাটি থামলো।
"আমি বাইরে চলে যাচ্ছি" ব্যথিত গলায় তমাল বলল।
"আমি জানি" মাটি দীর্ঘশ্বাস লুকালো।
"ওখানে যাবার আগে আমি তোমার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাই" গম্ভীর ও দৃঢ় গলায় বলে তমাল।
"না, কোনো সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনো হয়নি।আমি আমার টার্গেট আচিভ করি। ততদিন যদি তোমার একই মানষিক অবস্থা থাকে তখন সিদ্ধান্ত নিও আমি বাঁধা দেব না" নীচু গলায় বলল মাটি।
"ততদিনে যদি আমার মানষিকতা বদলে যায়"
মাটি স্মিত  হেসে বলল, " আমার মানষিকতা একই থাকবে"
তমাল অপলকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল, "পাগলী"








Tuesday, 23 October 2018

প্রেম~৮ম

আজ একমাস পর তমাল কলেজে ঢুকলো। ক্যাম্পাসের গেট পেরনোর সাথে সাথে সকলেই তমালএর কুশল জিজ্ঞেস করছিল। তমাল খুঁজছিল আর একজন কে প্রতিদিন সে দুবার করে ফোন করেছে কিন্তু কোনও বারই তমাল তোলেনি। জানে যে প্রবালের কাছ থেকে নিয়মিত খবর নিয়েছে। কলেজের কোলাপসিবল পেরতেই সামনে মাটি, "কেমন? আছেন" তমাল কে দেখে মাটি উছ্বসিত। নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয় তমাল, "যেমন দেখছেন।" মাটি একটু দমে যায় তমালের এই উত্তর সে আশা করে নি। তমাল একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, "কি দরকার?আপনি তো নিজের প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই কাউকে বলেন না!" মাটি যে এই ধরনের কথা আশা করেনি সে তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অপ্রস্তুত সে একবার তমালের দিকে একবার শোভার দিকে তাকিয়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেল। শোভা তমালের এই ব্যবহারে বিস্মিত। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেও পিছু নিল মাটির। তমাল এতটা রুঢ় হয়ে মনে মনে কষ্টই পেলো। কি দরকার ছিল এমনভাবে বলার, না বললেই ভালো হতো! নিজের ব্যবহারে নিজেরই মেজাজটা খিঁচরে গেল। নিজের অজান্তেই একবার চারিদিক তাকালো।

 মাটির কথাতেই প্রবাল সহেলীর পিছনে ছেলে লাগিয়েছিল। তিনদিনের মাথায় কলেজের একটি ছেলে সহেলীর সাথে দেখা করে টাকা চাইতে আসে। প্রবালের ছেলেদের চাপে পরে ছেলেটি স্বীকার করে যে টাকার বিনিময়ে তমালের উপর চড়াও হয়েছিলো। আর সেই টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কেউ নয় স্বয়ং সহেলী। সব কিছু জানাজানির পর সহেলী কলেজ ছেড়ে চলে গেছে।
তমালের এই দুর্ঘটনার পর তমালের বাবা আর ছেলেকে এখানে রাখতে নারাজ। তমালের জ্যাঠা আর দাদু আমেরিকা থাকে। তাই তমালকেও সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি পড়াশোনা সেখানেই হবে।এইজন্যও মনটা বিক্ষিপ্ত ছিল। মাটির ওপর রাগটা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।কারনে অকারনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মাটিকে অপদস্থ করতে শুরু করলো তমাল। তমাল চাইছিলো একবার মাটি প্রতিবাদ করুক। কিন্ত মাটি যেন পাষাণ হয়ে গেছে কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ছলে গেছে প্রতিবার।
          দিন সাতেক পর একদিন কলেজের সবাই চলে গেছে। তমাল বেরিয়ে খানিকটা হাটার পর রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে শোভা, "আপনার সাথে একটু কথা ছিলো, সময় হবে?" কাছেই একটা স্ল্যাব ছিলো। সেখানে গিয়েই তমাল বসলো। এখনও বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি সে আয়ত্ব করতে পারেনি। প্রথম কথা শোভাই শুরু করলো,"আপনি বিদেশে যাবার আগে মাটির সাথে রিলেশন টা ঠিক করে নিন"
"আমাদের মধ্যে কোনও বিশেষ রিলেশন নেই যা ঠিক করার দরকার আছে" জেদি ঘোড়ার মতো বল্ল তমাল।
"তাই নাকি! তাহলে সকলের সামনে 'আপনি' টা নিজেদের মধ্যে 'তুমি' হয়ে যায় কেনো?! কি লুকাতে চান বিশ্ব সংসারের কাছে? আড়াল থেকে কেনো দেখেন মাটিকে?" তমাল মাথা নীচু করে চুপ করে বসে আছে হেরে যাওয়া জুয়ারির মত।
"আপনি যদি মনে করেন আপনার দেওয়া এই মানষিক চাপের ও প্রতিবাদ করবে, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। ও কোনদিনই তা করবে না কারন নিজেকে দোষী  মনে করে" শোভা একটু থামতেই তমাল যেন জেগে ওঠে,"দোষী কি ও নয়!! চার-চারটা দিন ও আমার সাথে অভিনয় করে গেছে!! নিজের স্বার্থটুকু ছাড়া ও কোনদিন কি বুঝেছে?"
তমালের অবুঝ শিশুমনকে বোঝাতে গিয়ে শোভার গলা নরম হয়ে গেল, " ও অভিনয় করেনি। আপনি ওর যেটুকু দেখেছিলেন সেটুকুই আসল, আমরা যেটা দেখি সেটা তো একটা মুখোশ। আপনি ওর বিশেষ কেউ বলেই তো ও তদন্ত টা করেছিলো। কলেজে তো কত কিছু হচ্ছে সেখানে তো ও নাক গলায়নি।আর স্বার্থের কথা বলছেন? আজ পর্যন্ত কি চেয়েছে আর কি নিয়েছে ও আপনার কাছ থেকে।" তমাল চুপ। একটু থেমে শোভা আবার শুরু করলো,"ও তখন ক্লাস নাইনে পরে। ওর বাবার একটা খুব বড়ো দুর্ঘটনার শিকার হন, যার ফলে ওনার একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়। উনি খুব বড় একটা চাকরি করতেন সেটাও খোয়াতে হয়। তখন খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিলো ওদের। তারপর ওর বাবা একটা ছোটখাটো চাকরি পান আর ওর মা সমস্ত গয়না বিক্রি করে একটা বুটিক খোলেন। এসব কথা ও কখনো কাউকে বলে না। আমি আগাগোড়া ওর সাথে ছিলাম তাই জানি। তখনই ও আমার সামনে প্রতিজ্ঞা করে যে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে, বাবার সেই সুখ সেই বিলাসিতা না ফিরিয়ে ও নিজের জন্য ভাববেনা। আমাকে এটাও বলে ও যদি কখনো নিজের প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুতও হয় আমি যেন মনে করিয়ে দেই।" শোভা চুপ করলো। তমালও চুপ। কাছের কোনও ঝোপ থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল।নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে তমাল উঠে দাঁড়াল,"আমার ভুল আমাকেই রেক্টিফাই করতে হবে। চলুন আপনাকে অটো ধরে দেই।"
































Sunday, 21 October 2018

প্রেম~৭ম

আজ ষষ্ঠ দিন মাটি নিয়মিত যায় তমাল কে দেখতে যায় যার ফলশ্রুতি কলেজ অনিয়মিত। আজ যখন সাইকলজি ক্লাসে ঢুকলো শোভা আগে থেকেই ছিল। মাটি কে দেখে সড়ে গিয়ে বসার জায়গা দিল।
"তমাল কে দেখতে গিয়েছিলি?" শুরুটা শোভাই করলো।
"হুমমম" সংক্ষিপ্ত উত্তর।
"আপসেট মনে হচ্ছে" শোভা বল্ল
"ঠিক আপসেট না। আজ ছেড়ে দেবে, বাড়ি যাবে" মনে হল যেন মাটি দির্ঘ্যশ্বাস টা লোকালো।
শোভা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্ল, "তুই বোধহয় ভুলে যাচ্ছিস"
খুব অবাক হয়ে মাটি প্রশ্ন করল, "কি ভুলে গেছি"
শোভা বলে চল্ল, "ক্লাস নাইনে তুই প্রতীজ্ঞা করেছিলি....." ভুলে যাওয়া কথা মনে পড়লো মাটির। বাবার সেবার খুব বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিলো। যেকারনে বাবাকে বড় চাকরিটা ছাড়তে হয়েছিল। একদিন স্কুলে এই শোভার কাছেই মাটি বলেছিলো, আগে আমি নিজের পায়ে দাঁড়বো তারপর অন্যকিছু ভাববো।মাটি এবার সত্যিই আপসেট হয়ে পড়লো। এতো গুরুত্বপূর্ন কথা সে ভুলে গেলো কি করে। বাবার অপমান মার কষ্ট সব ভুলে গেল সে!
ক্লাস শেষ করে বাইরে বেরিয়ে দেখলো প্রবাল একটি ছেলের সাথে কথা বলছে। মাটি গিয়ে সামনে দাঁড়তেই ছেলেটি চলে গেল। প্রবাল মাটির দিকে ঘুরলো।
"খবর পেলেন কিছু৷" মাটির প্রশ্নের উত্তরে প্রবাল বল্ল, "সেটাই তো আশ্চর্য্য লাগছে। কোত্থাও কোনও খবর নেই!"।
" সহেলীর পিছনে লোক লাগান" মাটির কথায় প্রবাল অবাক হয়ে, "আপনি সিওর?!!"
"না সিওর নই তবে আমার ইন্টিউশন তাই বলছে। চার চারটা দিন আমি ওর জন্যই নার্সিংহোমএ অপেক্ষা করেছি কিন্তু ও আসেনি।..... "
"আপনি ঠিক বলেছেন, যেখানে সারা কলেজ জানতো ব্যাপারটা, সেখানে ওকে জানানোর পর ও আকাশ থেকে পরেছিলো" কথা শেষ করে প্রবাল মাথা নাড়তে নাড়তে চলে গেলো।
প্রবাল চলে যেতে শোভা বলে উঠলো, "তুই এই কারনে রোজ যাচ্ছিলি?"
মাটি একটা তির্যক হাসি হেসে বল্ল, "সব যদি তুই বুঝে যেতি তাহলে তো দেশের আর এতো কষ্টই থাকতো নারে!"

আজ তমালের সেলাই কেটে আবার প্লাস্টার করে দেওয়া হবে।আজকের দিনটা থেকে কাল বাড়ি  যাবে। এই কদিন সব সময় মাটি তার সঙ্গে ছিল। যে নিজের পড়াশোনা আর কেরিয়ার নিয়ে এত সচেতন সে সব কিছু দূরে সড়িয়ে শুধু শুধু কেন এখানে এতদিন বসে রইলো? কেন? নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করছিল তমাল। দরজায় ক্যাঁচ আওয়াজ, প্রবাল এসেছে। আজ মাটি আসবেনা তমাল জানত। তবে মাটিকে দেখলে, ওর সাথে কথা বললে যে অদ্ভুত ফিলিং হয় সেটা তমালের খুব ভাল লাগে।  বাড়ির লোকের মুখোমুখি ও হবেনা সেটা তমাল জানত। ও সবার থেকে আলাদা। কোনোরকম আডভ্যান্টেজ নেওয়া ওর পছন্দ নয়
"কিরে আজ কেমন ফিল করছিস" প্রবালের কথায় সম্বিত ফিরলো তমালের।
"বেটার, কিছু জানতে পারলি কাজটা কার"
"পরশু পর্যন্ত পারিনি। তবে কাল মাটি একটা ক্লু দিলো। ভেবে দেখলাম ওর কথা দম আছে। সেইমতো ছেলে লাগিয়েছি। একটু দেরী লাগবে হয়তো কারন আমরা দেরী করে ফেলেছি। দেখা যাক। চাপ নিসনা।" প্রবাল যেন নতুন রাস্তা পেয়েছে। কাল যখন এখান থেকে বেরিয়েছিলো খুব মুষড়ে পরেছিলো।
"কি বলেছে মাটি?" তুমালের কথায় হরহর করে বলেদিলো সব কথা প্রবাল।মাটি যে বলতে বারণ করেছিল, সে কথা আর মনেই রইলো না। এত কথার উত্তরে তমাল যখন শুধু "ও" বলল তখন প্রবাল নিজের ভুলটা বুঝলো। তমাল বুঝলো কত বড় বোকা সে! মাটি কোনো মনের তাগিদে নয় এসেছিল থেকেছিলো শুধু স্বার্থের তাগিদে!! মাটির মত মেয়ের কাছে মনের তাগিদ আসা করাই বোকামি। মাটিও অন্য মেয়েদের মতই। ছি ছি ছি কি বোকা সে, বালিতে প্রাসাদ তৈরির স্বপ্ন দেখেছিলো।




















Tuesday, 9 October 2018

প্রেম~ ৬ বর্ণালী রায় পম্পা



মাটি কলেজ ক্যাম্পাসেই এক প্রফেসরএর কাছে টিউশন নেয়।যেদিনই টিউশন থাকে তমাল কোন না কোনো অছিলায় রাত পর্যন্ত কলেজে থাকে। কিন্তু মাটির সামনে আসে না। দেখায় যে সে পার্টির কাজে রয়েছে কিন্তু মাটির বিশ্বাস সে মাটির জন্যই থাকে। মাটির এই ব্যাপারটা একেবারেই ভালো লাগেনা। আজ সে ঠিক করেই এসেছে যে তমালের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে। স্যারের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটু থমকে গেলো, কারন বাইরে ভীষণ অন্ধকার। এটা হয়ে সুবিধেই হল কারন তমাল তাহলে আসেপাশেই আছে। মাটি জোড়ে বলে উঠল, "আড়ালে কেন বেড়িয়ে এস"। একটি পরে গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এল ছায়ামূর্তি,  নিসন্দেহে তমাল। মাটি বিরক্ত হয়ে বলে," তুমি আমার পিছু নাও কেন"
তমাল ক'এক সেকেন্ড মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,"তোমার ভুল হচ্ছে, আমি কারোরই  পিছু নেই না, বা নিচ্ছি না"
মাটি এবার বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল," যে ডিউটিটা তুমি এখানে দিচ্ছো সেটা সহেলীর পিছনে দিলে ভালো করবে মনে হয়।"
তমাল কিছুক্ষন মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল ধীরে ধীরে।
মাটি মনে মনে ভাবল 'বাঁচা গেল'।
কিন্তু সত্যিই  কি বাঁচা গেল! পরদিন কোচিং সেরে বেরিয়ে সে অনুভব করল, না আজ আর তমাল নেই তার কাছাকাছি। মন টা একটু বিষন্ন হল।ভেবেছিলো বারন না করলেও হয়তো তমাল শুনবেনা। কিন্তু এইভাবে মেনে নেবে ভাবেনি।
একটু এগিয়ে মোড়ের মাথায় প্রবালকে দেখতে পেল। কয়েকজন ছেলের সাথে উত্তজিত বাক্যালাপ করছিলো। তমাল বড়লোকের ছেলে,  ওর বাবা বড় বিজনেস ম্যান।থাকে 'পশ' এলাকার সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে কিন্তু প্রবালের বাবা কলেজের সামান্য কেরানী, থাকে কলেজ ক্যাম্পাসে। তাই ওকে ওখানে ওই সময় দেখে আশ্চর্য হয়নি। কিন্তু মন বলছিলো কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে। মাটি এগিয়ে গেলো সেইদিকে। মাটি কে এগিয়ে আসতে দেখে ছেলেগুলো কে ছেড়ে এগিয়ে এল প্রবাল। মাটি জিজ্ঞেস করল,"খারাপ কিছু ঘটেছে কি"। প্রবালের মুখ শুকনো, বলল, "খারপ তো বটেই। কাল তমাল তোমার সাথে কথা বলে যখন ফিরে যাচ্ছিলো তখন কেউ বা কারা ওর মাথায় মেরে অচেতন করে বাঁ পা টা ভেঙে দিয়ে গেছে, কম্পাউন্ড ফ্র‍্যাকচার। আজ দুপুরে জ্ঞান ফিরেছে।সবাই খুব চাপে ছিল।এখন অব্জার্ভেশনএ আছে"
"কে করতে পারে বলে মনে হয় আপনাদের" মাটি জিজ্ঞেস করলো
"লোক লাগিয়েছি, দেখি কি খবর আসে। একটু আগে তো শতরূপ ফোন করে খবর নিলো " শতরূপ বিরোধী দলের হেড।
"ফোন করেছিল বলে ও সন্দেহের তালিকার বাইরে নয়" মাটি চিন্তিত গলায় বলল, "আপনার ফোন নাম্বারটা দেবেন?" কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসের গেটের কাছে পৌছে গিয়েছিলো। অটো আসতেই উঠে পড়লো মাটি।
মনটা ভীষণ ভাবে অশান্ত। কিছু ভালো লাগছিলো না। প্রবালকে ফোন করলো মাটি,"আমি কি একবার ওনাকে দেখতে পারি?"
প্রবাল খুব উৎফুল্ল হয়ে বলল," নিশ্চয়ই!  সকালে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা। সকালে কেউ যাবেও না। আপনি নার্সিংহোমএর সামনে চলে আসবেন।আমি বলে রাখব"
মাটি অনুনয়ের সুরে বলল, " দয়া করে ওনাকে জানাবেন না"
ওপার থেকে কোনও উত্তর  না পেয়ে মাটি 'হ্যালো' বলতেই  প্রবালের উত্তর ভেসে এলো, "ওকে বলবনা"

আইসিইউ তে রয়েছে তমাল। মাটি নিশব্দে দরজা খুলে ঢুকলো। তমালের চোখ বন্ধ, সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পা বাড়ালো দরজার দিকে। "কিছু না বলেই চলে যাবে!" অভাবনীয় ভাবে তমালের গলা পেয়ে চমকে উঠেছিল মাটি।"তুমি জেগে আছো!!"
"আছি। আমার মন বলছিল তুমি আসবে" তমাল তার স্বাভাবিক ভারি গলাতেই বলল।কিন্তু দূর্বলতা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
"কখন কলেজ যাবে?" তমাল জিজ্ঞেস করল। মাটি উত্তর দিচ্ছে না দেখে তমাল বেডের উপরে রাখা মাটির হাতটা ছুঁলো। মাটি শিউরে উঠলো,"তোমার হাত টা কি ঠান্ডা!"
তমাল হাত সড়িয়ে নিয়ে বলল,"এসিতে আছি তো, তাছাড়া প্রচুর ব্লাডও পরে গেছে।" মাটি হাতটা চাদরের ভিতরে ঢুকিয়ে চাদরটা ভালো করে গুঁজে দিলো।
"তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেনা" তমাল পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে যেতে চাইলো।
"কলেজ যাব না" মাটি নখ খুটতে খুটতে বল্ল।
"কেন?"
"এমনি, ভালো লাগছেনা"
"মাটি কলেজ কামাই করছে!অবিশ্বাস্য ঠেকছে।" তমাল মাটির থেকে চোখ সড়ায়নি। মাট অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ  মুখ তুলে বলল, " কেন আমি কি মানুষ নই? আমার কি ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকতে নেই"
"তবু তুমি স্বিকার করবে না যে আমি নেই বলে তুমি যাবেনা।" তমাল ঠোঁটের কোনায় হাসিটা ঝুলিয়ে রেখে বলল।
মাটি উঠে দাঁড়ালো, "সময় হয়ে এসেছে"
তমাল করুনস্বরে অনুনয়ের চোখে বলল,"একটু বসো না,কে জানে কবে আবার দেখা হবে তোমার সাথে!"
"তুমি বিশ্রাম করো, আমি আবার আসবো" মাটি বেরিয়ে এল। দরজার লুকিং উইন্ডো দিয়ে দেখলো শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তমাল।

প্রেম~ ৫ বর্নালী রায়


সহেলী কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারলোনা অথবা বদলাতে চাইল না। কারন ওর পিছনে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিলো তমাল। তবে মাটিও সজাগ হয়ে গিয়েছিল।
ফেয়ারওয়েল হয়ে গেছে, এবার পড়াশোনায় মন দেবার পালা। সেদিন মা বলল,"সবই তো হচ্ছে, শুধু পড়াশোনাটায় মনে হচ্ছে একটু যেন ঢিলা পড়েছে"। মা এমনিতে বকাবকি করে না। এইভাবেই বলে। আজ তাই কলেজে পা দিয়েই মায়ের কথাটা কানে বাজছিলো। আজ আর ক্লাস বাঙ্ক না।
মন দিয়ে ইংলিশ ম্যামের লেকচার শুনছে হঠাৎ মনে হল শোভা কামিজের হাতাটা ধরে টানছে। বিরক্ত হয়ে শোভার দিকে তাকাতেই, দৃষ্টি চলে গেল শোভা কে পেরিয়ে জানলার বাইরে। এই জানলাটা করিডোরের দিকে। সেখানে তমাল দাঁড়িয়ে। মাটির সাথে চোখাচোখি হতেই সড়ে গেল। মাটি শোভার দিকে তাকালো। শোভার মুখে বিষ্ময় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।বিষ্মিত মাটিও, কি দেখছিলো তমাল!

এই ঘটনার পর কেটে গেছে আরও একটা মাস। মাটি ভুলে গেছে সেদিনের সেই ঘটনা। কিন্তু এটা ও বুঝতে পারে যে তমালের বোধহয় কিছু একটা মানষিক পরিবর্তন হচ্ছে যেটা মাটি হয়তো বুঝতে পারছেনা। কারন মাটি কলেজের মধ্যে যেখানেই যাচ্ছে আসেপাশে কোথাও না কোথাও তমাল কে সে দেখছে। হতে পারে সেটা কোইন্সিডেন্ট। মাটি ব্যাপারটাকে পাত্তা দিতে চায়না। কিন্তু শোভা খুচিয়ে খুচিয়ে সেই ব্যাপারটাকেই তুলে আনে বার বার। এই নিয়ে শোভার সাথে একদিন বেশ একচোট হয়েও গেলো।
ইংলিশ প্রজেক্ট করতে হবে শেক্সপিয়ারএর একটা নাটক কে বিশ্লেষণ  করতে হবে। মাটি প্রচুর খেটেছে প্রজেক্টটা নিয়ে। অবশেষে সন্ধ্যেবেলা শেষ করলো লাইব্রেরিতে বসে। কালই জমা নেবে প্রজেক্টটা। শেষ করে চারিদিকে একবার দেখে নিলো। কলেজ ছুটি  হয়ে গেছে অনেকক্ষন। শুধু মাটি আর সহেলী রয়েছে। সহেলীও সম্ভবত প্রজেক্টই করছিল। মাটি পেপারগুলো ভালো করে ফাইল করে টেবিলের ওপরে রেখে বুক গুলো জায়গামত রাখতে গেলো। এসে দেখে ফাইল নেই সাথে সহেলীও নেই।মাটি উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেড়িয়ে আসে লাইব্রেরি থেকে।দরজার সামনে তমালের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা। মাটি মেঝেতে বসে পরে কাঁদতে থাকে।তমাল ভীষনভাবে বিষ্মিত, "তুমি এখনো বাড়ি যাওনি! একি কি হয়েছে!" মাটি যেন তমাল কে দেখে বল পেল। খুলে বল্ল  সব তমাল কে। তমাল শান্ত করল ওকে, " শোন শান্ত হও। তুমি এখন বাড়ি যাও। ব্যাপারটা আমাকে দেখতে দাও। আমি প্রবালকে ডেকে দিচ্ছি। ও তোমাকে বাসস্ট্যান্ড পর্য্যন্ত এগিয়ে দেবে"। মাটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,"কে প্রবাল!"। তমাল মুচকি হেসে মাটির চোখের জল মুছিয়ে বলে,"ওই যে, আমার ছানা!" মাটির লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ তুলে হাঁটা দিলো। তমাল পিছন থেকে বলল,"দাঁড়াও!!"। মাটি পিছনে না তাকিয়েই বল্ল, "আমার কাউকে লাগেনা"

সারারাত টেনশনে ঠিকমত ঘুম হলনা। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ পৌঁছে গেল।গেটেই দেখা হল শোভার সাথে। ওকে সব খুলে বলতে, ও রাগে ফুঁসতে থাকে। বিল্ডিংএর কোলাপ্সিবল পেরতেই সামনে তমাল দাঁড়িয়ে সামনে। এগিয়ে দিলো মাটির প্রজেক্ট কিন্তু ফাইল কভারটা অন্য। মাটি ওটা হাতে নিতেই তমাল মাটির খালি ফাইল কভারটা এগিয়ে দিল যেটা সামান্য আগুনে পোড়া।তমাল মাথা নিচু করে বল্ল,"আমি আগুন থেকে প্রজেক্টটা বাঁচাতে পেরেছি, কিন্তু ফাইলটা..."  কারোরই আর বুঝতে বাকী থাকেনা কে করতে পারে এই কাজ। শোভা প্রচন্ড রেগে প্রায় চিৎকার করে ওঠে, " কোনো শাস্তি আপনি দিচ্ছেন না কেনো ওকে, সব জেনেশুনেও"
তমাল শোভার কথায় উত্তেজিত হয়ে বলে,"শাস্তি তো আমি দিয়েছিলাম। আপনার বন্ধুরই তা পছন্দ হয়নি। আপনার বন্ধুর প্রটেকশনএর জন্য সহেলীকে আমার বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।"
মাটিও এবার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,"কে বলেছিল প্রটেকশন দিতে, আমি তোমার পায়ে ধরেছিলাম!!"
তমাল বিরক্ত হয়ে বল্ল, "তোমাকে বলাই বৃথা। কিছু বোঝ না, খালি তর্ক করো" কথা শেষ করে তমাল পিছন ফিরে চলে গেল।
শোভা আর মাটি এসে ক্লাসে বসলো। দুজনেই চুপ, দু'জনেই ভাবছে। হঠাৎ শোভা বলল, "তোরা কবে থেকে তোরা একে অন্যকে 'তুমি' করে বলতে শুরু করলি?"
মাটি বিরক্ত হয়ে বলল, "জানিনা। তোর আর কাজ নেই?"
ধমক দিয়ে শোভার মুখ বন্ধ করে দিলেও প্রশ্নটা মাটির মনেও ঘুরঘুর করতে লাগলো, কবে থেকে আর কেন!!


প্রেম ~৪ বর্ণালী রায় পম্পা



ট্যাক্সিতে যেতে যেতে মাটি ভাবছিলো প্রতিটা ঘটনা। তাহলে কি তমাল সহেলীর ব্রেক আপ হয়ে গেলো! মন থেকে মেনে নেওয়া যাচ্ছিলো না, নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছিলো। তবে এটাও ঠিক সহেলী আজ যেটা করেছে তার কোনও ক্ষমা হয়না। কিন্তু তাই বলে ব্রেক আপটাও মানা যায়না।তবে কি কথা বলবে তমালের সাথে? কিন্তু সেটাও কি ঠিক হবে? একটা সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আলোচনা তমাল পছন্দ নাও করতে পারে....

হয়তো বিধাতা চাইছিলেন মাটি কথা বলুক তমালের সাথে। লাইব্রেরিতে মাটির মুখোমুখিই এসে বসলো তমাল। মাটি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে একবার "কিপ সাইলেন্ট" বোর্ডটার দিকে তাকালো তারপর ব্যাগ থেকে একটা স্লিপ বার করে লিখলো "একটু কথা ছিলো"। স্লিপ্ টা এগিয়ে দিল তমালের দিকে।একটু পরে মাটির সামনে ও একটা স্লিপ পরলো যাতে লেখা," জানতাম, বাইরে আসুন" তমাল উঠে বেরিয়ে গেছে। মাটিও তমালের পিছু নিলো। লাইব্রেরীর বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল তমাল। মাটিকে দেখেই সামান্য হেসে বলল, "আমি জানতাম আপনি কিছু অন্ততঃ বলবেন।" এরমধ্যেই লাইব্রেরী থেকে দুজন বেরিয়ে গেল এবং ওদের দেখে অর্থপূর্ণ হাসি হাসলো। তমালের চোখ এড়ালোনা,"এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে চলুন ক্যান্টিনে বসা যাক"। ক্যান্টিন ফাঁকাই ছিলো। সব ক্লাস চলছে। মাটির প্রথম ক্লাসটা ছিলো না। তবু এসেছিল, প্রথমত তমালের সাথে কথা বলার দরকার ছিল আর দ্বিতীয়ত লাইব্রেরীতে কাজ ছিলো। "বলুন কি বলবেন" তমালের কথায় সম্বিত ফিরল।কোনোরকম ভণিতা নাকরে সরাসরি বলল মাটি"কালকের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রেক আপ একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না?" মনে হলো তমাল এই কথাটা আশা করেনি। আবার আগের খোলসের মধ্যে ঢুকে গেলো তমাল। গম্ভির হয়ে প্রশ্ন করলো, "আপনার কি মনে হচ্ছে লঘু পাপে গুরু দন্ড হয়ে যাচ্ছে?"
"অবশ্যই, আর তাছাড়া আপনি কি ওকে একটুও ভালবাসেন না!"
মাটির প্রশ্নের উত্তরে তমালের চোখ জ্বলে উঠল, "তমালের কাছে কেউ ভালোবাসা পেতে আসেনা। সবাই সুবিধা পেতেই আসে। তবে আপনি যখন বলছেন আমি সহেলীর সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নেব। আশা করি আপনার অপরাধ বোধ আর থাকবেনা..." তমাল শব্দ করে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।

পরেরদিন থেকে সহেলীকে সবার দেখা যেতে লাগলো তমালের সাথে। তবে তমাল যেন একটু বেশিই কেয়ার নিচ্ছে সহেলীর। সে হোক, আপত্তি নেই। মাটির প্রতি আর সহেলীর কোনও আক্ষেপ থাকবেনা, এই যা বাঁচোয়া।

Saturday, 6 October 2018

প্রেম ৩

ট্যাক্সিতে যেতে যেতে মাটি ভাবছিলো প্রতিটা ঘটনা। তাহলে কি তমাল সহেলীর ব্রেক আপ হয়ে গেলো! মন থেকে মেনে নেওয়া যাচ্ছিলো না, নিজেকে অপরাধি মনে হচ্ছিলো। তবে এটাও ঠিক সহেলী আজ যেটা করেছে তার কোনও ক্ষমা হয়না। কিন্তু তাই বলে ব্রেক আপটাও মানা যায়না।তবে কি কথা বলবে তমালের সাথে? কিন্তু সেটাও কি ঠিক হবে? একটা সম্পুর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আলোচনা তমাল পছন্দ নাও করতে পারে....

হয়তো বিধাতা চাইছিলেন মাটি কথা বলুক তমালের সাথে। লাইব্রেরিতে মাটির মুখোমুখিই এসে বসলো তমাল। মাটি কিছুক্ষন অপেক্ষা করে একবার "কিপ সাইলেন্ট" বোর্ডটার দিকে তাকালো তারপর ব্যাগ থেকে একটা স্লিপ বার করে লিখলো "একটু কথা ছিলো"। স্লিপ্ টা এগিয়ে দিল তমালের দিকে।একটু পরে মাটির সামনে ও একটা স্লিপ পরলো যাতে লেখা," জানতাম, বাইরে আসুন" তমাল উঠে বেরিয়ে গেছে। মাটিও তমালের পিছু নিলো। লাইব্রেরীর বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিল তমাল। মাটিকে দেখেই সামান্য হেসে বলল, "আমি জানতাম আপনি কিছু অন্ততঃ বলবেন।" এরমধ্যেই লাইব্রেরী থেকে দুজন বেরিয়ে গেল এবং ওদের দেখে অর্থপূর্ণ হাসি হাসলো। তমালের চোখ এড়ালোনা,"এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলার থেকে চলুন ক্যান্টিনে বসা যাক"। ক্যান্টিন ফাঁকাই ছিলো। সব ক্লাস চলছে। মাটির প্রথম ক্লাসটা ছিলো না। তবু এসেছিল, প্রথমত তমালের সাথে কথা বলার দরকার ছিল আর দ্বিতীয়ত লাইব্রেরীতে কাজ ছিলো। "বলুন কি বলবেন" তমালের কথায় সম্বিত ফিরল।কোনোরকম ভণিতা নাকরে সরাসরি বলল মাটি"কালকের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ব্রেক আপ একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেলো না?" মনে হলো তমাল এই কথাটা আশা করেনি। আবার আগের খোলসের মধ্যে ঢুকে গেলো তমাল। গম্ভির হয়ে প্রশ্ন করলো, "আপনার কি মনে হচ্ছে লঘু পাপে গুরু দন্ড হয়ে যাচ্ছে?"
"অবশ্যই, আর তাছাড়া আপনি কি ওকে একটুও ভালবাসেন না!"
মাটির প্রশ্নের উত্তরে তমালের চোখ জ্বলে উঠল, "তমালের কাছে কেউ ভালোবাসা পেতে আসেনা। সবাই সুবিধা পেতেই আসে। তবে আপনি যখন বলছেন আমি সহেলীর সাথে ঝামেলা মিটিয়ে নেব। আশা করি আপনার অপরাধ বোধ আর থাকবেনা..." তমাল শব্দ করে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়িয়ে বেড়িয়ে গেলো।

পরেরদিন থেকে সহেলীকে সবার দেখা যেতে লাগলো তমালের সাথে। তবে তমাল যেন একটু বেশিই কেয়ার নিচ্ছে সহেলীর। সে হোক, আপত্তি নেই। মাটির প্রতি আর সহেলীর কোনও আক্ষেপ থাকবেনা, এই যা বাঁচোয়া।














প্রেম ২

পড়াশোনার চাপে মাটির খেয়াল থাকেনা কোনো দিকে নজর দেবার। কিন্তু মাঝে মাঝে চোখ চলে যায় তমালের দিকে।এক ইয়ার উঁচু তমালের সমস্ত কাজে মনোনিবেশ দেখে মাটি খুব আশ্চর্য হয়।এর মধ্যে একমাস হতে চলেছে।   ফেসার্স ওয়েলকামএর দিন এসে গেল। নির্দিষ্ট দিনে মায়ের একটা নীল রঙের সিল্ক পড়লো মাটি। শোভার মা শাড়ি পড়েন না বলে মা শোভাকেও একটা শাড়ি বার করে দিলেন। বাবা দুজনকেই ট্যাক্সি করে কলেজে নামিয়ে দিয়ে অফিস চলে গেলো। কলেজের গেট দিয়ে ঢুকতেই মনটা ভিষণ ভালো হয়ে গেল। কি সুন্দর করে সাজিয়েছে চারিদিক। সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই একজন দিদি হাতে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে বলল, নাইস ব্যাংগেল। মাটি একটা সৌজন্যমুলক হাসি হেসে করিডোরের দিকে পা বাড়ালো।মা জোড় করে এই চুড়িটা পড়িয়ে দিলো, ঘুঙুর দেওয়া চুড়ি, সবাই তাকিয়ে দেখছে। ধুত বলে মাটি চুড়িটা খুলে ফেল্লো। শোভা আঁতকে উঠলো, খুলিস না!!  কি সুন্দর। শোভাও পরাবে র মাটিও পরবেনা। এই টানাপোড়েনে চুড়ি হাত থেকে মেঝেতে পরে আরও দ্বিগুন আওয়াজ করে গড়াতে গড়াতে চল্ল। কথায় বলে যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয় আর বাঘ  করিডরের শেষে দাঁড়িয়ে, চুড়ি বাঘের হাতে। ঠিক এই সময় পিছন থেকে শোভাকে কেউ ডাকলো, শোভা সেদিকে এগিয়ে গেল। তমাল চুড়ি হাতে এগিয়ে এল। মাটির হাতে চুড়ি দিয়ে বল্ল, চুড়ির সৌন্দর্য হাতে, হ্যান্ডব্যাগে নয়। তমাল চলে গেছে। শোভা ফিরে এল। মাটি চুড়ি হাতে গলিয়ে অডিটোরিয়াম এর দিকে এগিয়ে গেল। অডিটোরিয়ামে ঢুকে ওরা একটু অবাকই হল। কারন ওরা ছাড়া কেউ শাড়ি পরেনি। যাইহোক প্রথমে গান হলো, তারপর হলো আবৃত্তি।  মাটিকে অবাক করে আবৃত্তি করলো তমাল।আবৃত্তি শেষে শোভা হাততালি দিতে দিতে বল্ল, ছেলেটা গুন আছে ফালতু ছেলে নয়, বল? মাটি বিরক্ত হয়ে বল্ল আবৃত্তি করলেই কেউ গুনবান হয়ে যায়না। এরপর হলো  শাপমোচন নৃত্যনাট্য।  অসাধারন করল সেকেন্ড ইয়ারের দিদিরা। থার্ড ইয়ারের দিদিরা সবার হাতে খাবার প্যাকেট  দিয়ে গেল।  সবাই  মিলে হইহই করে বেরিয়ে এল। নানা কথা বলতে বলতে কোলাপ্সিবল গেটের দিকে এগোচ্ছিল সবাই। মাটির চোখ গেলো ওয়েস্টপেপার বাস্কেটের দিকে। সেখানে একটা হলুদ কাগজ। এটা সেই কাগজ যেটার মধ্যে তমাল কবিতাটা লিখে রেখেছিল। সকলের দৃষ্টির অগোচরে ও কাগজটা তুলে ব্যাগে রেখেদিল।

পরেরদিন শোভা কলেজ যায়নি। মাটির একটা বই থেকে কিছু নোট নেবার ছিল। এই সুযোগে সেটা হয়ে যাবে। লাইব্রেরীতে ঢুকে দরকারি বই টা নিয়ে লিখতে সুরু করল। কয়েকটা টেবিল পরে তমাল বসেছিল। সেও কিছু নোট নিচ্ছিলো। একটু পরে লাইব্রেরি ম্যাম'এর কাছে গিয়ে কি বলাতে ম্যাম মাটি ক দেখিয়ে দিলেন। তমাল আবার নিজের জায়গায় বসলো। মাটি বুঝলো এই বইটাই ওরও লাগবে। মাটির লেখা হয়ে গিয়েছিল। বইটা তমালের সামনে রেখে সে বেরিয়ে গেল। তমাল দেখলো বই'এর ফাঁক দিয়ে হলুদ রঙের কাগজ উঁকি মারছে। খুলে দেখে তারই কবিতা লেখা কাগজট, তার সাথে আরও একটি ছোট্ট চিরকুট,  তাতে লেখা কবিতার স্থান কবির কল্পনায়, কবির হাতে। চিরকুট টা দেখে তমাল নিজের অজান্তেই হাসলো।

প্রেম ১

মাটির আজ নতুন কলেজ। নামকরা কলেজে তার ভর্তি হয়ে গেল স্রেফ মেরিটের জোড়ে। কলেজে ঢুকেই দেখলো প্রচুর ছেলেমেয়ে। মাটি কে দেখেই শোভা এগিয়ে এলো। শোভা অভিযোগ করলো, স্কুলে কত আগে চলে আসতি আজ এত দেরি কেন করলি, আমি কখন থেকে দাঁড়িয়ে। মাটি বাবা কে চলে যেতে বলল কিন্তু জানে বাবা ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

মাটি মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। ছোটবেলা থেকে সনাতনি প্রথায় মানুষ। মা খুব সনাতনী প্রথায় বিশ্বাসী। সালোয়ার কামিজ, শাড়ি এইসব পরে সে বড় হয়েছে। ক্লাস টেনের পর যখন জিন্স পরার জন্য বায়না করেছিল। তখন মা একটা সর্তেই রাজী হয়েছিলো যে সাথে কুর্তি পরতে হবে টি-সার্ট চলবেনা।এখন কলেজে নতুন সংযোজন, হাফহাতা কাপড়ের জ্যাকেট। বাবা অবশ্য এর কোনও প্রতিবাদ করেনি। তাই মাটিও করেনি।

মাটি আর শোভা খানিকটা এগোতেই পুরনো স্কুলের একজনের সাথে দেখা হলো। কথা বলতে বলতে মাটি খেয়াল করলো একটি ছেলে সবাই কে লাইন করে এক এক করে ভিতরে ঢোকাচ্ছিলো। ঢোকবার আগে মাটি একবার গেটের দিকে তাকালো। বাবা তাকিয়ে আছে। মাটি বাবার দিকে হাত নাড়লো। যে ছেলেটি সবাই কে লাইন করে  ঢোকাচ্ছিলো সে জিজ্ঞেস করলো, বাবা?। মাটি একটু বিরক্ত হয়েই বলল, হ্যাঁ।  তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করা মাটি একেবারেই পছন্দ করে না।

সবাই মিলে অডিটোরিয়ামে এসে জড়ো হবার পর একটি সুদর্শন ছেলে সামনে এসে দাঁড়ালো। শোভা মাটির চুড়িদারের হাতাটা টেনে ফিস ফিস করে বল্ল,  জি.এস। ছেলেটি হাতজোড় করে নমস্কারের ভঙ্গি করে বল্ল, "আমি তমাল, এই কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি, আপনাদের যেকোনও অসুবিধায় আমি আপনাদের পাশে থাকব। আপনাদের সিকিউরিটির জন্য আমার জানা দরকার আপনাদের সাথে কে বা কারা আসছেন। সেটা বাবাই হোক বা বয়ফ্রেন্ড।" শেষের বাক্যটা মাটির দিকে তাকিয়েই বল্ল ছেলেটি।

অডিটোরিয়াম থেকে বেড়িয়ে শোভা র মাটি কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলো।বা করিডোরে রাস্তা আটকে দাঁড়ালো তিনটি ছেলে। তার মধ্যে যে একটু হোমরা-চোমরা সে বলে উঠলো, কি সুন্দরী  নতুন মনে হচ্ছে। আলাপটা একটু হয়ে যাক। আমি..... কথা শেষ হবার আগেই  মাটি পিছন থেকে শুনতে পেল গলা পরিস্কার করার আওয়াজ। ছেলেটির নজর তখন মাটি কে টপকে পিছন দিকে। শোভা পিছন ফিরে একবার দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু মাটি হাত ধরে টেনে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে এলো। শোভা এগোতে এগোতে বল্ল, "তমাল ছিলো"। মাটি বল্ল, " সবাই সমান, মেয়েদের ইম্প্রেস করার নিত্য নতুন কায়দা"
মাটির কলেজে ক্যান্টিন আছে এবং যথেষ্ট উন্নত মানের খাবার সেখানে পাওয়া যায় অত্যন্ত স্বল্প দামে। কিন্তু মাটি রোজ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাবারই পক্ষপাতী। অবশ্য এ ছাড়া উপায়ও নেই। টিফিন না দিয়ে মা ছাড়বেই না। পঞ্চমদিনের কথা, সেদিন শোভা ফ্রাইডরাইস আর আলুরদম এনেছিলো। টিফিনে দুজনে তাইই ভাগ করে খেয়েছিল। মাটির টিফিন একদম ধরাই ছিলো। বাড়িতে ভর্তি টিফিন বক্স নিয়ে গেলে মা দেবে আচ্ছা করে তাই টিফিনের পরের পিরিয়ড টা মাটির অফ থাকাতে সুবিধা হলো। শোভাকে ক্লাস পর্য্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার ক্যান্টিন ফিরে এল মাটি। টিফিন বক্সটা খুলে খেতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে তমাল তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঢুকলো। ক্যান্টিনের বৌদি সব ঝারপোঁছ করছিলেন। তমাল জিজ্ঞেস করলো, "বৌদি কি আছে?" খুব কাচুমাচু হয়ে বৌদি বললেন"সব তো শেষ"। ঘরের মধ্যে যেন বাজ পড়লো। মাটি দেখলো তমালের মুখ ক্ষিদেতে শুকিয়ে গেছে। মাটি ওর টিফিন বক্সটা নিয়ে তমালের টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো। তমাল মুখ তুলে তাকাতে মাটি বলল, "আপনি আমার টিফিন টা খান"। খুব অবাক হয়ে তাকাল তমাল, " আপনি কি খাবেন!"। "আমার পেট ভর্তি আছে। একটু আগেই বন্ধুর টিফিন সেয়ার করেছি। তাছারা আমার মা বলেন অভুক্তকে খাবার দিলে পুন্য হয়"। তমাল মিস্টি হেসে বল্ল, আপনার মা ঠিকই বলেছেন। আজকের এই খাবার আপনার আমার কাছে উধার রইল"। মাটি ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এলো। কলেজ ছুটির পর মাটি শোভার জন্য অপেক্ষা করছিলো সেই সময় তমালের রাইট হ্যান্ড সমর এসে মাটির টিফিন বক্স হাতে দিয়ে বলল,তমাল বলেছে আপনি কেন ক্যান্টিনের খাবার খান না আজ জানা গেল। মাসিমার হাতের রান্না অসাধারণ।