সহেলী কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারলোনা অথবা বদলাতে চাইল না। কারন ওর পিছনে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট ছিলো তমাল। তবে মাটিও সজাগ হয়ে গিয়েছিল।
ফেয়ারওয়েল হয়ে গেছে, এবার পড়াশোনায় মন দেবার পালা। সেদিন মা বলল,"সবই তো হচ্ছে, শুধু পড়াশোনাটায় মনে হচ্ছে একটু যেন ঢিলা পড়েছে"। মা এমনিতে বকাবকি করে না। এইভাবেই বলে। আজ তাই কলেজে পা দিয়েই মায়ের কথাটা কানে বাজছিলো। আজ আর ক্লাস বাঙ্ক না।
মন দিয়ে ইংলিশ ম্যামের লেকচার শুনছে হঠাৎ মনে হল শোভা কামিজের হাতাটা ধরে টানছে। বিরক্ত হয়ে শোভার দিকে তাকাতেই, দৃষ্টি চলে গেল শোভা কে পেরিয়ে জানলার বাইরে। এই জানলাটা করিডোরের দিকে। সেখানে তমাল দাঁড়িয়ে। মাটির সাথে চোখাচোখি হতেই সড়ে গেল। মাটি শোভার দিকে তাকালো। শোভার মুখে বিষ্ময় পরিষ্কার ফুটে উঠেছে।বিষ্মিত মাটিও, কি দেখছিলো তমাল!
এই ঘটনার পর কেটে গেছে আরও একটা মাস। মাটি ভুলে গেছে সেদিনের সেই ঘটনা। কিন্তু এটা ও বুঝতে পারে যে তমালের বোধহয় কিছু একটা মানষিক পরিবর্তন হচ্ছে যেটা মাটি হয়তো বুঝতে পারছেনা। কারন মাটি কলেজের মধ্যে যেখানেই যাচ্ছে আসেপাশে কোথাও না কোথাও তমাল কে সে দেখছে। হতে পারে সেটা কোইন্সিডেন্ট। মাটি ব্যাপারটাকে পাত্তা দিতে চায়না। কিন্তু শোভা খুচিয়ে খুচিয়ে সেই ব্যাপারটাকেই তুলে আনে বার বার। এই নিয়ে শোভার সাথে একদিন বেশ একচোট হয়েও গেলো।
ইংলিশ প্রজেক্ট করতে হবে শেক্সপিয়ারএর একটা নাটক কে বিশ্লেষণ করতে হবে। মাটি প্রচুর খেটেছে প্রজেক্টটা নিয়ে। অবশেষে সন্ধ্যেবেলা শেষ করলো লাইব্রেরিতে বসে। কালই জমা নেবে প্রজেক্টটা। শেষ করে চারিদিকে একবার দেখে নিলো। কলেজ ছুটি হয়ে গেছে অনেকক্ষন। শুধু মাটি আর সহেলী রয়েছে। সহেলীও সম্ভবত প্রজেক্টই করছিল। মাটি পেপারগুলো ভালো করে ফাইল করে টেবিলের ওপরে রেখে বুক গুলো জায়গামত রাখতে গেলো। এসে দেখে ফাইল নেই সাথে সহেলীও নেই।মাটি উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেড়িয়ে আসে লাইব্রেরি থেকে।দরজার সামনে তমালের সাথে মুখোমুখি ধাক্কা। মাটি মেঝেতে বসে পরে কাঁদতে থাকে।তমাল ভীষনভাবে বিষ্মিত, "তুমি এখনো বাড়ি যাওনি! একি কি হয়েছে!" মাটি যেন তমাল কে দেখে বল পেল। খুলে বল্ল সব তমাল কে। তমাল শান্ত করল ওকে, " শোন শান্ত হও। তুমি এখন বাড়ি যাও। ব্যাপারটা আমাকে দেখতে দাও। আমি প্রবালকে ডেকে দিচ্ছি। ও তোমাকে বাসস্ট্যান্ড পর্য্যন্ত এগিয়ে দেবে"। মাটি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,"কে প্রবাল!"। তমাল মুচকি হেসে মাটির চোখের জল মুছিয়ে বলে,"ওই যে, আমার ছানা!" মাটির লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেল। সে তাড়াতাড়ি ব্যাগ তুলে হাঁটা দিলো। তমাল পিছন থেকে বলল,"দাঁড়াও!!"। মাটি পিছনে না তাকিয়েই বল্ল, "আমার কাউকে লাগেনা"
সারারাত টেনশনে ঠিকমত ঘুম হলনা। সকালে নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ পৌঁছে গেল।গেটেই দেখা হল শোভার সাথে। ওকে সব খুলে বলতে, ও রাগে ফুঁসতে থাকে। বিল্ডিংএর কোলাপ্সিবল পেরতেই সামনে তমাল দাঁড়িয়ে সামনে। এগিয়ে দিলো মাটির প্রজেক্ট কিন্তু ফাইল কভারটা অন্য। মাটি ওটা হাতে নিতেই তমাল মাটির খালি ফাইল কভারটা এগিয়ে দিল যেটা সামান্য আগুনে পোড়া।তমাল মাথা নিচু করে বল্ল,"আমি আগুন থেকে প্রজেক্টটা বাঁচাতে পেরেছি, কিন্তু ফাইলটা..." কারোরই আর বুঝতে বাকী থাকেনা কে করতে পারে এই কাজ। শোভা প্রচন্ড রেগে প্রায় চিৎকার করে ওঠে, " কোনো শাস্তি আপনি দিচ্ছেন না কেনো ওকে, সব জেনেশুনেও"
তমাল শোভার কথায় উত্তেজিত হয়ে বলে,"শাস্তি তো আমি দিয়েছিলাম। আপনার বন্ধুরই তা পছন্দ হয়নি। আপনার বন্ধুর প্রটেকশনএর জন্য সহেলীকে আমার বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।"
মাটিও এবার উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো,"কে বলেছিল প্রটেকশন দিতে, আমি তোমার পায়ে ধরেছিলাম!!"
তমাল বিরক্ত হয়ে বল্ল, "তোমাকে বলাই বৃথা। কিছু বোঝ না, খালি তর্ক করো" কথা শেষ করে তমাল পিছন ফিরে চলে গেল।
শোভা আর মাটি এসে ক্লাসে বসলো। দুজনেই চুপ, দু'জনেই ভাবছে। হঠাৎ শোভা বলল, "তোরা কবে থেকে তোরা একে অন্যকে 'তুমি' করে বলতে শুরু করলি?"
মাটি বিরক্ত হয়ে বলল, "জানিনা। তোর আর কাজ নেই?"
ধমক দিয়ে শোভার মুখ বন্ধ করে দিলেও প্রশ্নটা মাটির মনেও ঘুরঘুর করতে লাগলো, কবে থেকে আর কেন!!
No comments:
Post a Comment