Saturday, 6 October 2018

প্রেম ১

মাটির আজ নতুন কলেজ। নামকরা কলেজে তার ভর্তি হয়ে গেল স্রেফ মেরিটের জোড়ে। কলেজে ঢুকেই দেখলো প্রচুর ছেলেমেয়ে। মাটি কে দেখেই শোভা এগিয়ে এলো। শোভা অভিযোগ করলো, স্কুলে কত আগে চলে আসতি আজ এত দেরি কেন করলি, আমি কখন থেকে দাঁড়িয়ে। মাটি বাবা কে চলে যেতে বলল কিন্তু জানে বাবা ঠিক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

মাটি মধ্যবিত্ত বাড়ির মেয়ে। ছোটবেলা থেকে সনাতনি প্রথায় মানুষ। মা খুব সনাতনী প্রথায় বিশ্বাসী। সালোয়ার কামিজ, শাড়ি এইসব পরে সে বড় হয়েছে। ক্লাস টেনের পর যখন জিন্স পরার জন্য বায়না করেছিল। তখন মা একটা সর্তেই রাজী হয়েছিলো যে সাথে কুর্তি পরতে হবে টি-সার্ট চলবেনা।এখন কলেজে নতুন সংযোজন, হাফহাতা কাপড়ের জ্যাকেট। বাবা অবশ্য এর কোনও প্রতিবাদ করেনি। তাই মাটিও করেনি।

মাটি আর শোভা খানিকটা এগোতেই পুরনো স্কুলের একজনের সাথে দেখা হলো। কথা বলতে বলতে মাটি খেয়াল করলো একটি ছেলে সবাই কে লাইন করে এক এক করে ভিতরে ঢোকাচ্ছিলো। ঢোকবার আগে মাটি একবার গেটের দিকে তাকালো। বাবা তাকিয়ে আছে। মাটি বাবার দিকে হাত নাড়লো। যে ছেলেটি সবাই কে লাইন করে  ঢোকাচ্ছিলো সে জিজ্ঞেস করলো, বাবা?। মাটি একটু বিরক্ত হয়েই বলল, হ্যাঁ।  তার ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করা মাটি একেবারেই পছন্দ করে না।

সবাই মিলে অডিটোরিয়ামে এসে জড়ো হবার পর একটি সুদর্শন ছেলে সামনে এসে দাঁড়ালো। শোভা মাটির চুড়িদারের হাতাটা টেনে ফিস ফিস করে বল্ল,  জি.এস। ছেলেটি হাতজোড় করে নমস্কারের ভঙ্গি করে বল্ল, "আমি তমাল, এই কলেজের জেনারেল সেক্রেটারি, আপনাদের যেকোনও অসুবিধায় আমি আপনাদের পাশে থাকব। আপনাদের সিকিউরিটির জন্য আমার জানা দরকার আপনাদের সাথে কে বা কারা আসছেন। সেটা বাবাই হোক বা বয়ফ্রেন্ড।" শেষের বাক্যটা মাটির দিকে তাকিয়েই বল্ল ছেলেটি।

অডিটোরিয়াম থেকে বেড়িয়ে শোভা র মাটি কথা বলতে বলতে এগোচ্ছিলো।বা করিডোরে রাস্তা আটকে দাঁড়ালো তিনটি ছেলে। তার মধ্যে যে একটু হোমরা-চোমরা সে বলে উঠলো, কি সুন্দরী  নতুন মনে হচ্ছে। আলাপটা একটু হয়ে যাক। আমি..... কথা শেষ হবার আগেই  মাটি পিছন থেকে শুনতে পেল গলা পরিস্কার করার আওয়াজ। ছেলেটির নজর তখন মাটি কে টপকে পিছন দিকে। শোভা পিছন ফিরে একবার দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু মাটি হাত ধরে টেনে ওদের পাশ কাটিয়ে চলে এলো। শোভা এগোতে এগোতে বল্ল, "তমাল ছিলো"। মাটি বল্ল, " সবাই সমান, মেয়েদের ইম্প্রেস করার নিত্য নতুন কায়দা"
মাটির কলেজে ক্যান্টিন আছে এবং যথেষ্ট উন্নত মানের খাবার সেখানে পাওয়া যায় অত্যন্ত স্বল্প দামে। কিন্তু মাটি রোজ বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে যাবারই পক্ষপাতী। অবশ্য এ ছাড়া উপায়ও নেই। টিফিন না দিয়ে মা ছাড়বেই না। পঞ্চমদিনের কথা, সেদিন শোভা ফ্রাইডরাইস আর আলুরদম এনেছিলো। টিফিনে দুজনে তাইই ভাগ করে খেয়েছিল। মাটির টিফিন একদম ধরাই ছিলো। বাড়িতে ভর্তি টিফিন বক্স নিয়ে গেলে মা দেবে আচ্ছা করে তাই টিফিনের পরের পিরিয়ড টা মাটির অফ থাকাতে সুবিধা হলো। শোভাকে ক্লাস পর্য্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আবার ক্যান্টিন ফিরে এল মাটি। টিফিন বক্সটা খুলে খেতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে তমাল তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ঢুকলো। ক্যান্টিনের বৌদি সব ঝারপোঁছ করছিলেন। তমাল জিজ্ঞেস করলো, "বৌদি কি আছে?" খুব কাচুমাচু হয়ে বৌদি বললেন"সব তো শেষ"। ঘরের মধ্যে যেন বাজ পড়লো। মাটি দেখলো তমালের মুখ ক্ষিদেতে শুকিয়ে গেছে। মাটি ওর টিফিন বক্সটা নিয়ে তমালের টেবিলের কাছে এগিয়ে গেলো। তমাল মুখ তুলে তাকাতে মাটি বলল, "আপনি আমার টিফিন টা খান"। খুব অবাক হয়ে তাকাল তমাল, " আপনি কি খাবেন!"। "আমার পেট ভর্তি আছে। একটু আগেই বন্ধুর টিফিন সেয়ার করেছি। তাছারা আমার মা বলেন অভুক্তকে খাবার দিলে পুন্য হয়"। তমাল মিস্টি হেসে বল্ল, আপনার মা ঠিকই বলেছেন। আজকের এই খাবার আপনার আমার কাছে উধার রইল"। মাটি ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে এলো। কলেজ ছুটির পর মাটি শোভার জন্য অপেক্ষা করছিলো সেই সময় তমালের রাইট হ্যান্ড সমর এসে মাটির টিফিন বক্স হাতে দিয়ে বলল,তমাল বলেছে আপনি কেন ক্যান্টিনের খাবার খান না আজ জানা গেল। মাসিমার হাতের রান্না অসাধারণ।

No comments:

Post a Comment