Tuesday, 23 October 2018

প্রেম~৮ম

আজ একমাস পর তমাল কলেজে ঢুকলো। ক্যাম্পাসের গেট পেরনোর সাথে সাথে সকলেই তমালএর কুশল জিজ্ঞেস করছিল। তমাল খুঁজছিল আর একজন কে প্রতিদিন সে দুবার করে ফোন করেছে কিন্তু কোনও বারই তমাল তোলেনি। জানে যে প্রবালের কাছ থেকে নিয়মিত খবর নিয়েছে। কলেজের কোলাপসিবল পেরতেই সামনে মাটি, "কেমন? আছেন" তমাল কে দেখে মাটি উছ্বসিত। নির্লিপ্তভাবে উত্তর দেয় তমাল, "যেমন দেখছেন।" মাটি একটু দমে যায় তমালের এই উত্তর সে আশা করে নি। তমাল একটু এগিয়ে এসে জিজ্ঞেস করে, "কি দরকার?আপনি তো নিজের প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথাই কাউকে বলেন না!" মাটি যে এই ধরনের কথা আশা করেনি সে তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। অপ্রস্তুত সে একবার তমালের দিকে একবার শোভার দিকে তাকিয়ে ক্লাসের দিকে এগিয়ে গেল। শোভা তমালের এই ব্যবহারে বিস্মিত। কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে সেও পিছু নিল মাটির। তমাল এতটা রুঢ় হয়ে মনে মনে কষ্টই পেলো। কি দরকার ছিল এমনভাবে বলার, না বললেই ভালো হতো! নিজের ব্যবহারে নিজেরই মেজাজটা খিঁচরে গেল। নিজের অজান্তেই একবার চারিদিক তাকালো।

 মাটির কথাতেই প্রবাল সহেলীর পিছনে ছেলে লাগিয়েছিল। তিনদিনের মাথায় কলেজের একটি ছেলে সহেলীর সাথে দেখা করে টাকা চাইতে আসে। প্রবালের ছেলেদের চাপে পরে ছেলেটি স্বীকার করে যে টাকার বিনিময়ে তমালের উপর চড়াও হয়েছিলো। আর সেই টাকা দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আর কেউ নয় স্বয়ং সহেলী। সব কিছু জানাজানির পর সহেলী কলেজ ছেড়ে চলে গেছে।
তমালের এই দুর্ঘটনার পর তমালের বাবা আর ছেলেকে এখানে রাখতে নারাজ। তমালের জ্যাঠা আর দাদু আমেরিকা থাকে। তাই তমালকেও সেখানে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বাকি পড়াশোনা সেখানেই হবে।এইজন্যও মনটা বিক্ষিপ্ত ছিল। মাটির ওপর রাগটা যেন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল।কারনে অকারনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে মাটিকে অপদস্থ করতে শুরু করলো তমাল। তমাল চাইছিলো একবার মাটি প্রতিবাদ করুক। কিন্ত মাটি যেন পাষাণ হয়ে গেছে কোনো উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে ছলে গেছে প্রতিবার।
          দিন সাতেক পর একদিন কলেজের সবাই চলে গেছে। তমাল বেরিয়ে খানিকটা হাটার পর রাস্তা আগলে দাঁড়িয়ে শোভা, "আপনার সাথে একটু কথা ছিলো, সময় হবে?" কাছেই একটা স্ল্যাব ছিলো। সেখানে গিয়েই তমাল বসলো। এখনও বেশিক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি সে আয়ত্ব করতে পারেনি। প্রথম কথা শোভাই শুরু করলো,"আপনি বিদেশে যাবার আগে মাটির সাথে রিলেশন টা ঠিক করে নিন"
"আমাদের মধ্যে কোনও বিশেষ রিলেশন নেই যা ঠিক করার দরকার আছে" জেদি ঘোড়ার মতো বল্ল তমাল।
"তাই নাকি! তাহলে সকলের সামনে 'আপনি' টা নিজেদের মধ্যে 'তুমি' হয়ে যায় কেনো?! কি লুকাতে চান বিশ্ব সংসারের কাছে? আড়াল থেকে কেনো দেখেন মাটিকে?" তমাল মাথা নীচু করে চুপ করে বসে আছে হেরে যাওয়া জুয়ারির মত।
"আপনি যদি মনে করেন আপনার দেওয়া এই মানষিক চাপের ও প্রতিবাদ করবে, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। ও কোনদিনই তা করবে না কারন নিজেকে দোষী  মনে করে" শোভা একটু থামতেই তমাল যেন জেগে ওঠে,"দোষী কি ও নয়!! চার-চারটা দিন ও আমার সাথে অভিনয় করে গেছে!! নিজের স্বার্থটুকু ছাড়া ও কোনদিন কি বুঝেছে?"
তমালের অবুঝ শিশুমনকে বোঝাতে গিয়ে শোভার গলা নরম হয়ে গেল, " ও অভিনয় করেনি। আপনি ওর যেটুকু দেখেছিলেন সেটুকুই আসল, আমরা যেটা দেখি সেটা তো একটা মুখোশ। আপনি ওর বিশেষ কেউ বলেই তো ও তদন্ত টা করেছিলো। কলেজে তো কত কিছু হচ্ছে সেখানে তো ও নাক গলায়নি।আর স্বার্থের কথা বলছেন? আজ পর্যন্ত কি চেয়েছে আর কি নিয়েছে ও আপনার কাছ থেকে।" তমাল চুপ। একটু থেমে শোভা আবার শুরু করলো,"ও তখন ক্লাস নাইনে পরে। ওর বাবার একটা খুব বড়ো দুর্ঘটনার শিকার হন, যার ফলে ওনার একটা চোখ নষ্ট হয়ে যায়। উনি খুব বড় একটা চাকরি করতেন সেটাও খোয়াতে হয়। তখন খুব খারাপ অবস্থা হয়েছিলো ওদের। তারপর ওর বাবা একটা ছোটখাটো চাকরি পান আর ওর মা সমস্ত গয়না বিক্রি করে একটা বুটিক খোলেন। এসব কথা ও কখনো কাউকে বলে না। আমি আগাগোড়া ওর সাথে ছিলাম তাই জানি। তখনই ও আমার সামনে প্রতিজ্ঞা করে যে নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে, বাবার সেই সুখ সেই বিলাসিতা না ফিরিয়ে ও নিজের জন্য ভাববেনা। আমাকে এটাও বলে ও যদি কখনো নিজের প্রতিজ্ঞা থেকে বিচ্যুতও হয় আমি যেন মনে করিয়ে দেই।" শোভা চুপ করলো। তমালও চুপ। কাছের কোনও ঝোপ থেকে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল।নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে তমাল উঠে দাঁড়াল,"আমার ভুল আমাকেই রেক্টিফাই করতে হবে। চলুন আপনাকে অটো ধরে দেই।"
































No comments:

Post a Comment