Thursday, 25 October 2018

প্রেম~৯ম

মাটি কলেজ আসে সবার আগে। তখন সবে মাত্র অনিল কাকা কলাপসিবল খুলে ক্লাসরুমগুলোর তালা খোলে। আজ কোলাপসিবলের সামনে তমাল কে দেখে মাটি একটু অবাকই হলো। আজকের দিনটা একটু অন্যরকম কারন আজ সকাল থেকে বৃষ্টি হয়েই চলেছে।মাটি আজ এসেছে লাইব্রেরিতে একটা কাজ আছে তাই নইলে ও-ও আজ আসতো না। আজকের দিনটা বাড়ীতে বসে খিচুড়ি খাবার দিন।
মাটি ছাতা বন্ধ করে ব্যাগ থেকে প্লাস্টিক বার করে তার মধ্যে রাখলো। ততক্ষন পর্যন্ত তমাল মাটি কে জরিপ করছিলো। মাটি ক্লাসের দিকে পা বাড়াতেই তমাল রাস্তা আগলে দাঁড়ালো, "তোমার সাথে কথা আছে"
খুব নির্লিপ্ত ভাবে মাটি বলল, "আমার আপনার সাথে কোনও কথা নেই"
তমাল কে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই মাটি ক্লাসের দিকে চলে যায়। হতবুদ্ধি তমাল দাঁড়িয়ে থাকে। সারাদিনে বহুবার তমাল চেষ্টা করে মাটির সাথে কথা বলতে কিন্তু প্রতিবারই মাটি তমালের চেষ্টায় ছাই ফেলে চলে যায়।
    আজ শোভা আসেনি। প্রথমে ভেবেছিল পরের ক্লাসগুলো না করে চলে যাবে মাটি। সারাদিন অবিশ্রান্ত ধারায় হয়েই চলেছে বৃষ্টি। হাতে গোনা স্টুডেন্ট এসেছে। টিচারাও এসেছে কম। কিন্তু পরে ভাবলো বাড়ি গিয়েই বা কি হবে, আধা দিন তো পেরিয়েই গেছে। ইম্পরট্যান্ট কিছু লেখার ছিলো তাই লাইব্রেরিতে গিয়েই বসলো।বেশ কিছুক্ষন পর মনে হলো কেউ পাশে বসলো। খানিক পর একটা স্লিপ এল, 'প্লিজ আমার কথাটা শুনে, তারপর ডিসিশন নাও'। মাটি উঠে পড়লো। বইটা জমা দিয়ে বেড়িয়ে এল। অনুভব করলো পিছনে তমালও আসছে। মাটি ক্যান্টিনে গিয়ে বসলো। চারটে বেজে গেছে তাই ক্যান্টিনে ফুড কাউন্টার বন্ধ হয়ে গেছে। চেয়ার গুলো উলটে টেবিলের ওপর তোলা ছিলো, তারই একটা নামিয়ে মাটি বসলো। তমাল সামনে এসে বসতেই মাটি বলল,"কেন এই ভাবে আমাকে বিরক্ত করছেন আপনি?"
"আপনি!!আপনি বলছো তুমি আমায়!" আহত তমাল বলে ওঠে।
"কেন, এই সম্বোধন তো নতুন নয় আপনার কাছে। বরং তুমি টাই নতুন ছিলো। 'তুমি' তো কাছের মানুষদের বলে তাই না?"
"তুমি কি আমায় কাছের মানুষ মনে করোনা?" তমাল অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।
"আমার মনে করাতে কি আসে যায়। আপনি যে মনে করেন না সেটা তো প্রমানিত।" মাটি দৃঢ় জবাব দেয়।"গত কদিনের ঘটনা কি সেই প্রমান দেয় না?"
"তোমার কি মনে হয় তুমি আমার কাছের নও"
"নই'ই তো"
"আমি তোমাকে ভালোবাসি, সেটাও কি তুমি বোঝনা" নিরুপায় দেওয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া আহত এক মানুষের মতো বলে ওঠে তমাল।
"এখন আর এসব কথার কোনো মুল্যই নেই" মাটি উঠে দাঁড়িয়ে চেয়ার  টেবিলের নিচে ঠেলে দিতেই তমালের মুখ দিয়ে একটা অস্ফুট আওয়াজ বেড়লো। মাটি দরজার দিকে এগিয়ে গিয়েছিল পিছন ঘুরে তমালএর অবস্থা দেখতে গিয়ে দেখে তমাল হাঁটু চেপে ধরে বসে আসে, চোখ দিয়ে জল পরছে। মাটি যখন চেয়ারটা ঠেলে দিয়েছিলো সেটা গিয়ে লেগেছিলো তমালের চোট লাগা পায়ে, যেটা এখনো ঠিক মতো সাড়েনি। মাটি ছুটে এসে তমালের পায়ের কাছে বসে পড়লো
"কোথায় লেগেছে তোমার" মাটি ব্যস্ত হয়ে বলে "এই জন্য আমি বলেছিলাম তোমাকে বাড়িতেই থাকতে। আমার কথা কে শোনে"
"তাহলে মানছো তো আমি তোমার কাছের মানুষ" তমালের কথায় মাটি থমকে গেল, "উঠে বসো" তমাল হুকুমের স্বরে বলল। কিছুক্ষন দুজনেই চুপ, শুধু বাইরে বৃষ্টির অবিশ্রান্ত আওয়াজ।

"তোমায় ভালোবাসি বলেই অভিমান করেছিলাম। আর তাই......" নিরবতা ভাঙলো তমাল, "তুমি ভুল বুঝোনা আমায়। আমার মনে হয়েছিল তুমি তোমার স্বার্থের জন্যই আমার সাথে ছটাদিন নার্সিংহোম ছিলে"
"স্বার্থ তো আমার ছিলোই। তোমার ওই রকম অবস্থা দেখে আমার যে কি হচ্ছিলো তুমি বুঝবেনা। সহেলী আমায় বলেছিলো আমি তোমার কাছাকাছি গেলে ও আমার ক্ষতি করবে। সে ক্ষতি যে এমন সেতো আমি বুঝিনি।" এটুকু বলে মাটি থামলো।
"আমি বাইরে চলে যাচ্ছি" ব্যথিত গলায় তমাল বলল।
"আমি জানি" মাটি দীর্ঘশ্বাস লুকালো।
"ওখানে যাবার আগে আমি তোমার বিষয়ে একটা সিদ্ধান্তে আসতে চাই" গম্ভীর ও দৃঢ় গলায় বলে তমাল।
"না, কোনো সিদ্ধান্ত নেবার সময় এখনো হয়নি।আমি আমার টার্গেট আচিভ করি। ততদিন যদি তোমার একই মানষিক অবস্থা থাকে তখন সিদ্ধান্ত নিও আমি বাঁধা দেব না" নীচু গলায় বলল মাটি।
"ততদিনে যদি আমার মানষিকতা বদলে যায়"
মাটি স্মিত  হেসে বলল, " আমার মানষিকতা একই থাকবে"
তমাল অপলকে কিছুক্ষন তাকিয়ে বলল, "পাগলী"








No comments:

Post a Comment