মাটি কলেজ ক্যাম্পাসেই এক প্রফেসরএর কাছে টিউশন নেয়।যেদিনই টিউশন থাকে তমাল কোন না কোনো অছিলায় রাত পর্যন্ত কলেজে থাকে। কিন্তু মাটির সামনে আসে না। দেখায় যে সে পার্টির কাজে রয়েছে কিন্তু মাটির বিশ্বাস সে মাটির জন্যই থাকে। মাটির এই ব্যাপারটা একেবারেই ভালো লাগেনা। আজ সে ঠিক করেই এসেছে যে তমালের সাথে এই ব্যাপারে কথা বলবে। স্যারের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে একটু থমকে গেলো, কারন বাইরে ভীষণ অন্ধকার। এটা হয়ে সুবিধেই হল কারন তমাল তাহলে আসেপাশেই আছে। মাটি জোড়ে বলে উঠল, "আড়ালে কেন বেড়িয়ে এস"। একটি পরে গাছের আড়াল থেকে বেড়িয়ে এল ছায়ামূর্তি, নিসন্দেহে তমাল। মাটি বিরক্ত হয়ে বলে," তুমি আমার পিছু নাও কেন"
তমাল ক'এক সেকেন্ড মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,"তোমার ভুল হচ্ছে, আমি কারোরই পিছু নেই না, বা নিচ্ছি না"
মাটি এবার বেশ চিবিয়ে চিবিয়ে বলল," যে ডিউটিটা তুমি এখানে দিচ্ছো সেটা সহেলীর পিছনে দিলে ভালো করবে মনে হয়।"
তমাল কিছুক্ষন মাটির দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেল ধীরে ধীরে।
মাটি মনে মনে ভাবল 'বাঁচা গেল'।
কিন্তু সত্যিই কি বাঁচা গেল! পরদিন কোচিং সেরে বেরিয়ে সে অনুভব করল, না আজ আর তমাল নেই তার কাছাকাছি। মন টা একটু বিষন্ন হল।ভেবেছিলো বারন না করলেও হয়তো তমাল শুনবেনা। কিন্তু এইভাবে মেনে নেবে ভাবেনি।
একটু এগিয়ে মোড়ের মাথায় প্রবালকে দেখতে পেল। কয়েকজন ছেলের সাথে উত্তজিত বাক্যালাপ করছিলো। তমাল বড়লোকের ছেলে, ওর বাবা বড় বিজনেস ম্যান।থাকে 'পশ' এলাকার সুসজ্জিত ফ্ল্যাটে কিন্তু প্রবালের বাবা কলেজের সামান্য কেরানী, থাকে কলেজ ক্যাম্পাসে। তাই ওকে ওখানে ওই সময় দেখে আশ্চর্য হয়নি। কিন্তু মন বলছিলো কিছু একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে। মাটি এগিয়ে গেলো সেইদিকে। মাটি কে এগিয়ে আসতে দেখে ছেলেগুলো কে ছেড়ে এগিয়ে এল প্রবাল। মাটি জিজ্ঞেস করল,"খারাপ কিছু ঘটেছে কি"। প্রবালের মুখ শুকনো, বলল, "খারপ তো বটেই। কাল তমাল তোমার সাথে কথা বলে যখন ফিরে যাচ্ছিলো তখন কেউ বা কারা ওর মাথায় মেরে অচেতন করে বাঁ পা টা ভেঙে দিয়ে গেছে, কম্পাউন্ড ফ্র্যাকচার। আজ দুপুরে জ্ঞান ফিরেছে।সবাই খুব চাপে ছিল।এখন অব্জার্ভেশনএ আছে"
"কে করতে পারে বলে মনে হয় আপনাদের" মাটি জিজ্ঞেস করলো
"লোক লাগিয়েছি, দেখি কি খবর আসে। একটু আগে তো শতরূপ ফোন করে খবর নিলো " শতরূপ বিরোধী দলের হেড।
"ফোন করেছিল বলে ও সন্দেহের তালিকার বাইরে নয়" মাটি চিন্তিত গলায় বলল, "আপনার ফোন নাম্বারটা দেবেন?" কথা বলতে বলতে ক্যাম্পাসের গেটের কাছে পৌছে গিয়েছিলো। অটো আসতেই উঠে পড়লো মাটি।
মনটা ভীষণ ভাবে অশান্ত। কিছু ভালো লাগছিলো না। প্রবালকে ফোন করলো মাটি,"আমি কি একবার ওনাকে দেখতে পারি?"
প্রবাল খুব উৎফুল্ল হয়ে বলল," নিশ্চয়ই! সকালে ১১টা থেকে সাড়ে ১১টা। সকালে কেউ যাবেও না। আপনি নার্সিংহোমএর সামনে চলে আসবেন।আমি বলে রাখব"
মাটি অনুনয়ের সুরে বলল, " দয়া করে ওনাকে জানাবেন না"
ওপার থেকে কোনও উত্তর না পেয়ে মাটি 'হ্যালো' বলতেই প্রবালের উত্তর ভেসে এলো, "ওকে বলবনা"
আইসিইউ তে রয়েছে তমাল। মাটি নিশব্দে দরজা খুলে ঢুকলো। তমালের চোখ বন্ধ, সম্ভবত ঘুমাচ্ছে। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে পা বাড়ালো দরজার দিকে। "কিছু না বলেই চলে যাবে!" অভাবনীয় ভাবে তমালের গলা পেয়ে চমকে উঠেছিল মাটি।"তুমি জেগে আছো!!"
"আছি। আমার মন বলছিল তুমি আসবে" তমাল তার স্বাভাবিক ভারি গলাতেই বলল।কিন্তু দূর্বলতা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল।
"কখন কলেজ যাবে?" তমাল জিজ্ঞেস করল। মাটি উত্তর দিচ্ছে না দেখে তমাল বেডের উপরে রাখা মাটির হাতটা ছুঁলো। মাটি শিউরে উঠলো,"তোমার হাত টা কি ঠান্ডা!"
তমাল হাত সড়িয়ে নিয়ে বলল,"এসিতে আছি তো, তাছাড়া প্রচুর ব্লাডও পরে গেছে।" মাটি হাতটা চাদরের ভিতরে ঢুকিয়ে চাদরটা ভালো করে গুঁজে দিলো।
"তুমি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেনা" তমাল পুরনো প্রসঙ্গে ফিরে যেতে চাইলো।
"কলেজ যাব না" মাটি নখ খুটতে খুটতে বল্ল।
"কেন?"
"এমনি, ভালো লাগছেনা"
"মাটি কলেজ কামাই করছে!অবিশ্বাস্য ঠেকছে।" তমাল মাটির থেকে চোখ সড়ায়নি। মাট অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ মুখ তুলে বলল, " কেন আমি কি মানুষ নই? আমার কি ইচ্ছা অনিচ্ছা থাকতে নেই"
"তবু তুমি স্বিকার করবে না যে আমি নেই বলে তুমি যাবেনা।" তমাল ঠোঁটের কোনায় হাসিটা ঝুলিয়ে রেখে বলল।
মাটি উঠে দাঁড়ালো, "সময় হয়ে এসেছে"
তমাল করুনস্বরে অনুনয়ের চোখে বলল,"একটু বসো না,কে জানে কবে আবার দেখা হবে তোমার সাথে!"
"তুমি বিশ্রাম করো, আমি আবার আসবো" মাটি বেরিয়ে এল। দরজার লুকিং উইন্ডো দিয়ে দেখলো শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে তমাল।
No comments:
Post a Comment